Ads Area

ভারতের কৃষি - ভারতীয় কৃষির বৈশিষ্ট্য - ভারতীয় কৃষির সমস্যা ও সমাধান

ভারতের কৃষি - ভারতীয় কৃষির বৈশিষ্ট্য - ভারতীয় কৃষির সমস্যা ও সমাধান

ভারতের কৃষি - ভারতীয় কৃষির বৈশিষ্ট্য - ভারতীয় কৃষির সমস্যা ও সমাধান
ভারতের কৃষি - ভারতীয় কৃষির বৈশিষ্ট্য - ভারতীয় কৃষির সমস্যা ও সমাধান

বর্তমানে ভারত কৃষি উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানের অধিকারী। ২০০৭ সালের হিসেব অনুযায়ী, দেশের জিডিপি-তে কৃষি এবং বনবিদ্যা, কাষ্ঠশিল্প ইত্যাদি কৃষি-সহায়ক ক্ষেত্রগুলির অবদান ১৬.৬ শতাংশ। ভারতের মোট শ্রমশক্তির ৫২ শতাংশই এই ক্ষেত্রে নিযুক্ত।


মরিচ, আম, লেবু, পেঁপে, ফুলকপি উৎপাদনে ভারতের স্থান বিশ্বে প্রথম। কফি উৎপাদনে ভারতের স্থান বিশ্বে ষষ্ঠ। গবাদি পশুর সংখ্যার হিসেবেও ভারতের স্থান বিশ্বে প্রথম (২৮১,০০০,০০০)। গম, ধান, আখ, চিনাবাদাম, পেঁয়াজ ও অন্তর্দেশীয় মৎস্য উৎপাদনে ভারতের স্থান বিশ্বে দ্বিতীয়। তামাক উৎপাদনে ভারতের স্থান বিশ্বে তৃতীয়। বিশ্বের মোট উৎপাদিত ফলের ১০ শতাংশ ভারতে উৎপাদিত হয়।




ভারতের কৃষি সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য :


➢ কৃষিকাজ হলো প্রাথমিক অর্থনৈতিক ক্রিয়া-কলাপের অন্তর্গত।

➢ ভারতের প্রায় ৬১% মানুষ কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল।

➢ বর্তমানে মৎস্য চাষ, পশুপালন ও বৃক্ষরোপণ কৃষিকাজের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

➢ বিশ্বের মোট ফসলের ১০% ভারতে উৎপাদিত হয়।

➢ ভারতের কৃষিকাজ মৌসুমী বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভর করে।

➢ ভারতের মোট চাষের জমির প্রায় ৬৫% জল সেচের অন্তর্ভুক্ত।

➢ ভারতের কৃষি মূলত শ্রম নিবিড় কৃষি।

➢ ভারতের কৃষিতে ছদ্ম বেকারত্ব লক্ষ্য করা যায় অর্থাৎ ভারতবর্ষে চাষের জন্য যত লোক দরকার তার থেকে বেশি লোক কৃষিকাজে নিযুক্ত থাকে।

➢ ভারতবর্ষে কৃষি পদ্ধতি মূলত জীবিকা সত্ত্বাভিত্তিক (জীবনধারণের জন্য যে কৃষিকাজ করা হয়)।




ভারতীয় কৃষির বৈশিষ্ট্য :


ভারত একটি কৃষি নির্ভর দেশ। ভারতের অধিকাংশ মানুষ কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে অর্থাৎ তারা সরাসরি কৃষিকাজের সাথে যুক্ত থাকে। ভারতের অর্থনীতিতেও কৃষির গুরুত্ব অপরিসীম। এই ভারতীয় কৃষির বৈশিষ্ট্য গুলি নীচে আলোচনা করা হল - 


১) জীবিকা সত্ত্বাভিত্তিক কৃষি :

ভারতের কৃষির অধিকাংশই কৃষক তার নিজের ও পরিবারের খাদ্যের প্রয়োজন মেটানোর জন্য ব্যবহৃত করে। তাই এই কৃষিকে জীবিকাসত্ত্বাভিত্তিক কৃষি বলা হয়।


২) অত্যাধিক প্রকৃতি নির্ভর :

ভারতের কৃষি ব্যবস্থা অত্যাধিক মাত্রায় প্রকৃতি নির্ভর। মৌসুমি বৃষ্টিপাতের অনিশ্চয়তা ভারতে কৃষিজ উৎপাদন কে প্রভাবিত করে। যে বছর বেশি বৃষ্টিপাত হয় সে বছর বন্যা হয়ে কৃষিজ ফসল নষ্ট করে দেয় এবং যে বছর বৃষ্টিপাতের পরিমান কম হয় সে বছর খরা হয়ে কৃষিকাজ কে ব্যাহত করে দেয়।


৩) শ্রম নিবিড় কৃষি :

ভারতের জনসংখ্যার পরিমান প্রচুর হওয়ায় জমির উপর জনসংখ্যার চাপ অত্যন্ত বেশি। তাই ভারতে একই জমিতে প্রচুর শ্রম বিনিময়ের মাধ্যমে সারা বছর ধরে ফসল উৎপাদন করা হয়ে থাকে। অতি সহজেই কৃষির প্রয়োজনীয় শ্রম পাওয়া যায় বলে কৃষি কাজে তেমন কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার করা হয় না।


৪) বহুফসল কৃষি ব্যবস্থা :

ভারতীয় কৃষি একটি বহুফসলী কৃষি ব্যবস্থা। ভারতীয় কৃষিতে জলসেচ ব্যবস্থার বিকাশ ঘটিয়ে একই বছরের বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন ফসলের চাষ করা হয়ে থাকে।


৫) আঞ্চলিক বিশেষীকরণ :

ভারত একটি বিশাল বড় দেশ এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে ভিন্ন প্রকৃতির জলবায়ুর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় বলে বিভিন্ন ফসলের আঞ্চলিক বিশেষীকরণ দেখা যায়। যেমন - পূর্ব ভারতে পাট, পশ্চিম ও মধ্যভারতে গম ও ধান, দক্ষিন ভারতের বিভিন্ন স্থানের কোথাও রাবার, কোথাও কফি, কোথাও কার্পাস, কোথাও আবার মশলা চাষের প্রাধান্য দেখা যায়।


৬) শস্যাবর্তন প্রথার প্রবর্তন :

ভারতে নিবিড় পদ্ধতিতে চাষ করা হয় বলে জমির উর্বতা দ্রুত নষ্ট হয়। এই উর্বরতা পুনরুদ্ধারের জন্য শস্যাবর্তন পদ্ধতির প্রচলন ঘটেছে। যেমন - ধান চাষের পর ডাল, তারপর গম।


৭) প্রচ্ছন্ন বা ছদ্ম বেকারত্ব :

ভারতের কৃষির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল ছদ্ম বেকারত্ব। ভারতে কৃষি তে নিযুক্ত মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে কাজের সুযোগ অনেক কম। তাই কোন কোন বছর বা কোন কোন ঋতুতে বৃষ্টিপাতের পরিমান কম হলে কৃষিকাজ করা সম্ভব হয় না। তখন কৃষি কাজের সাথে নিযুক্ত অনেকে কাজ হারিয়ে ছদ্ম বেকারত্বের সৃষ্টি হয়।


৮) মাথা পিছু উৎপাদনের হার কম :

ভারতে হেক্টর প্রতি ফসল উৎপাদনের পরিমান বেশি হলেও অধিক জনসংখ্যার জন্য মাথাপিছু উৎপাদনের পরিমান অনেক কম হয়।


৯) ক্ষুদ্র ও ভাগচাষির প্রাধান্য :

ভারতীয় কৃষিতে ক্ষুদ্র ও ভাগচাষীর সংখ্যা অনেক বেশি। বেশিরভাগ কৃষক খুব অল্প পরিমান জমির মালিক আবার অনেকে অন্যের জমিতে কাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।


১০) কৃষিতে পশুশক্তির প্রাধান্য :

ভারতের অধিকাংশ দরিদ্র কৃষকই চাষের জন্য দামি যন্ত্রপাতি ব্যবহার না করে, আদিম পদ্ধতিতে পশুশক্তির দ্বারাই চাষবাস করে থাকে।


১১) জলসেচের ব্যবহার :

ভারতে সারাবছর বৃষ্টিপাত হয় না। ফলে জলসেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে নদীতে বাঁধ দিয়ে, জলাধার নির্মাণ করে সেখান থেকে খাল এর মাধ্যমে কৃষিজমিতে জল এনে প্রায় সারাবছর চাষাবাদ করা হয়।




ভারতে উৎপন্ন ফসলের শ্রেণিবিভাগ :


◾ ফসল রোপনের সময় অনুসারে: রোপনের সময় ভারতে উৎপন্ন ফসলগুলিকে প্রধানত তিনভাগে ভাগ করা যায় - রবিশস্য(Rabi), খারিফশস্য (Kharif) এবং জাইদ (Zaid)।


◾ ফসলের ব্যবহার অনুসারে: ফসলের ব্যবহার অনুসারে উৎপন্ন ফসলকে প্রধানত চার ভাগে ভাগ করা যায় - খাদ্য শস্য (Food Grains), অর্থকরী ফসল (Cash Crops), বাগিচা ফসল (Plantation Crops) এবং উদ্যান কৃষি (Horticulture Crops)।




ফসল রোপনের সময় অনুযায়ী উৎপন্ন ফসলের শ্রেণীবিভাগ :


১) খারিফ শস্য :


◾ বোনা - জুন-জুলাই

◾ কাটা - নভেম্বর-ডিসেম্বর

◾ বর্ষাকালে চাষ করা হয়

◾ জলসেচ প্রয়োজন হয় না

◾ মৌসুমী বৃষ্টির উপর নির্ভরশীল

◾ আমন ধান (অঘায়ণী ধান), পাট, তুলা, ভুট্টা, জোয়ার, বাদাম



২) রবি শস্য :


◾ বোনা - অক্টোবর-ডিসেম্বর

◾ কাটা - এপ্রিল-জুন

◾ শীতকালে চাষ করা হয়

◾ অধিক জলসেচ প্রয়োজন হয়

◾ মৌসুমী বায়ু নির্ভরশীল নয়

◾ বোরো ধান (ষেটে ধান), গম, যব, আলু, তৈলবিজ, ছোলা



৩) জাইদ শস্য :


◾ বোনা - ফেব্রুয়ারি-মার্চ

◾ কাটা - মে-জুন

◾ গ্রীষ্মকালে চাষ করা হয়

◾ বৃষ্টি ও জল সেচ দুটোই প্রয়োজন হয়

◾ মৌসুমী বায়ুর প্রভাব থাকেনা

◾ আউশ ধান (ভাদই ধান), বাদাম, তরমুজ, পাট, শসা, শাকসবজি




ফসল ব্যবহারের প্রকৃতি অনুযায়ী উৎপন্ন ফসলের শ্রেণীবিভাগ :


১) খাদ্য শস্য (Food Grains) :


▶ ফসলের নাম ➨ ধান

▶ তাপমাত্রা (°C) ➨ <35

▶ বৃষ্টিপাত (সেমি) ➨ 150 - 300

▶ মৃত্তিকা ➨ কর্দমাক্ত দোঁয়াশ, পলি

▶ রাজ্য ➨ পশ্চিমবঙ্গ, পাঞ্জাব, উত্তর প্রদেশ



▶ ফসলের নাম ➨ গম

▶ তাপমাত্রা (°C) ➨ 10 - 15

▶ বৃষ্টিপাত (সেমি) ➨ 5 - 15

▶ মৃত্তিকা ➨ হালকা দোঁয়াশ, বালি দোঁয়াশ, কাদা দোঁয়াশ

▶ রাজ্য ➨ উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, পাঞ্জাব



▶ ফসলের নাম ➨ শিম্বজাতীয় ফসল

▶ তাপমাত্রা (°C) ➨ 20 - 25

▶ বৃষ্টিপাত (সেমি) ➨ 50 - 75

▶ মৃত্তিকা ➨ শুষ্ক হালকা মৃত্তিকা

▶ রাজ্য ➨ মধ্যপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ



▶ ফসলের নাম ➨ বাজরা

▶ তাপমাত্রা (°C) ➨ 25 - 30

▶ বৃষ্টিপাত (সেমি) ➨ 40 - 50

▶ মৃত্তিকা ➨ বালি দোঁয়াশ, লাল এবং কালো মৃত্তিকা

▶ রাজ্য ➨ উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, গুজরাট



▶ ফসলের নাম ➨ রাগি

▶ তাপমাত্রা (°C) ➨ 20 - 30

▶ বৃষ্টিপাত (সেমি) ➨ 40 - 50

▶ মৃত্তিকা ➨ লাল মৃত্তিকা, বালি দোঁয়াশ

▶ রাজ্য ➨ কর্ণাটক, তামিলনাড়ু




২) অর্থকরী ফসল (Cash Crops) :


▶ ফসলের নাম ➨ তুলা

▶ তাপমাত্রা (°C) ➨ 21 - 30

▶ বৃষ্টিপাত (সেমি) ➨50 - 75

▶ মৃত্তিকা ➨ কৃষ্ণমৃত্তিকা, ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা

▶ রাজ্য ➨ মহারাষ্ট্র, গুজরাট, তেলেঙ্গানা



▶ ফসলের নাম ➨ রেশম

▶ তাপমাত্রা (°C) ➨ 21 - 30

▶ বৃষ্টিপাত (সেমি) ➨ 50 - 75

▶ মৃত্তিকা ➨ কৃষ্ণমৃত্তিকা, ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা

▶ রাজ্য ➨ কর্ণাটক, ঝাড়খন্ড, জম্মু ও কাশ্মীর



▶ ফসলের নাম ➨ পাট

▶ তাপমাত্রা (°C) ➨ 24 - 35

▶ বৃষ্টিপাত (সেমি) ➨ 150

▶ মৃত্তিকা ➨ হালকা বেলে অথবা দোঁয়াশ

▶ রাজ্য ➨ পশ্চিমবঙ্গ, বিহার



▶ ফসলের নাম ➨ আখ

▶ তাপমাত্রা (°C) ➨ 20 - 26

▶ বৃষ্টিপাত (সেমি) ➨ 100 - 150

▶ মৃত্তিকা ➨ দোঁয়াশ

▶ রাজ্য ➨ উত্তর প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, বিহার




৩) বাগিচা ফসল (Plantation Crops) :


▶ ফসলের নাম ➨ চা

▶ তাপমাত্রা (°C) ➨ 24 - 30

▶ বৃষ্টিপাত (সেমি) ➨ 125 - 375

▶ মৃত্তিকা ➨ ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা

▶ রাজ্য ➨ পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, তামিলনাড়ু



▶ ফসলের নাম ➨ কফি

▶ তাপমাত্রা (°C) ➨ 15 - 28

▶ বৃষ্টিপাত (সেমি) ➨ 150 - 200

▶ মৃত্তিকা ➨ ভালো জল পরিবহনযোগ্য পডসল মৃত্তিকা

▶ রাজ্য ➨ কর্ণাটক, কেরালা



▶ ফসলের নাম ➨ রবার

▶ তাপমাত্রা (°C) ➨ 25 - 30

▶ বৃষ্টিপাত (সেমি) ➨ 150 - 200

▶ মৃত্তিকা ➨ ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা

▶ রাজ্য ➨ কর্ণাটক, কেরালা, তামিলনাড়ু



▶ ফসলের নাম ➨ মশলা

▶ তাপমাত্রা (°C) ➨ -

▶ বৃষ্টিপাত (সেমি) ➨ -

▶ মৃত্তিকা ➨ -

▶ রাজ্য ➨ কেরালা, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক




৪) উদ্যান কৃষি (Horticulture Crops) :


বিজ্ঞানসম্মত আধুনিক পদ্ধতিতে এই কৃষিকাজ করা হয়। এতে মূলত শাকসবজি, ফল, ঔষধি বৃক্ষ উৎপাদন করা হয়। এই ধরনের পদ্ধতিতে ভারত ব্যাপকভাবে ফল ও শাকসবজি উৎপন্ন করে।




ভারতের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কৃষিজ ফসল :


ধান :


◾ অধিক জলসেচ প্রয়োজন হওয়ায় ধানকে তৃষ্ণার্ত ফসল বলে।

◾ পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলাকে ধানের গোলা বলা হয়।

◾ ধানের উচ্চ ফলনশীল বীজ গুলি হল - জয়া, রত্না, IR-8, IR-201

◾ ভারতে একটি জাইদ ফসল হল আউশ ধান।

◾ ভারতের অধিকাংশ ধান বর্ষাকালে খারিফ শস্য হিসাবে চাষ করা হয়।

◾ নার্সারি বেডঃ রোপন পদ্ধতিতে ছোট জমিতে ধানের বীজ ছড়িয়ে চারা তৈরি করা হয়, একে বলে নার্সারি বেড। কিছুদিন পরে চারা তুলে প্রধান জমিতে বসানো হয়।

◾ কেন্দ্রীয় ধান গবেষণাগার উড়িষ্যার কটক।

◾ পশ্চিমবঙ্গের ধান গবেষণাগার হুগলির চুঁচুড়া।

◾ আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা কেন্দ্র আছে ফিলিপাইনে।



গম :


◾ গমের উচ্চ ফলনশীল বীজের নাম - সোনা ২২৭, সোনালিকা ও কল্যাণ সোনা।

◾ ভারতে সবুজ বিপ্লব কথাটি পাঞ্জাব হরিয়ানার গম চাষের সঙ্গে যুক্ত ছিল।

◾ সবুজ বিপ্লবের প্রধান ফসল গম।

◾ ভারতের প্রধান গম গবেষণা কেন্দ্রটি হল - দিল্লির পুষা।

◾ আন্তর্জাতিক গম গবেষণা কেন্দ্র মেক্সিকো।



আখ :


◾ ভারতের কেন্দ্রীয় গবেষণাগার অবস্থিত উত্তরপ্রদেশের লখনৌ।

◾ দক্ষিণ ভারতের আখ গবেষণাগার কোয়েম্বাটুর।

◾ আন্তর্জাতিক আখ গবেষণা কেন্দ্র অবস্থিত কিউবার কিবস শহরে।

◾ ভারতের উত্তর প্রদেশকে আখের রাজ্য বলে।

◾ রেটুন - আর কাটার পরে জমিতে যে ছোট চারাগাছ জন্মায় তাকে রেটুন বলে। রেটুন হল আখের চারাগাছ। 'রেটুন ব্যবস্থা' প্রথম চালু হয় কিউবাতে।



কার্পাস :


◾ কৃষ্ণ মৃত্তিকা কার্পাস চাষের জন্য উপযুক্ত মাটি।

◾ মহারাষ্ট্র, গুজরাট, কর্ণাটক ও দাক্ষিণাত্য মালভূমির লাভা গঠিত কৃষ্ণ মৃত্তিকা অঞ্চল কার্পাস চাষের জন্য বিখ্যাত।

◾ কার্পাসকে তন্তুজ ফসল বলা হয়।

◾ বল উইভিল নামক পোকা তুলো গাছকে নষ্ট করে।

◾ দীর্ঘ আঁশযুক্ত কার্পাস চাষ পাঞ্জাব রাজ্যে দেখা যায়। দীর্ঘ আঁশযুক্ত তুলাকে সাগরদ্বীপীয় তুলা বলে।

◾ ভারতের কার্পাস গবেষণা কেন্দ্র অবস্থিত মহারাষ্ট্রের নাগপুরে।

◾ শ্রীলঙ্কা, জাপান ও আমেরিকাতে ভারতের তুলা রপ্তানি করা হয়।

◾ মিশর, কেনিয়া, রাশিয়া থেকে ভারত তুলা আমদানি করে।

◾ কার্পাসকে সিলভার ফাইবার বলা হয়।



চা :


◾ চা কে সোনালী পানীয় বলে।

◾ চা উৎপাদনে প্রথম অসাম রাজ্য।

◾ গুণমানে দার্জিলিং চা বিখ্যাত ও শ্রেষ্ঠ।

◾ Tea-বোর্ড কলকাতায় অবস্থিত।

◾ হেক্টর প্রতি চা উৎপাদনে কর্নাটকে স্থান প্রথম।

◾ কলকাতা বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি চা রপ্তানি হয়।

◾ ভারতের চা গবেষণাগার অবস্থিত অসমের জোরহাটে।

◾ ভারতে প্রধানত কালো চা চাষ করা হয়।

◾ চা তে ট্যানিন থাকে।

◾ ভারতে কালো চা কে CTC (Cut Twist and Curl) বলে।

◾ দক্ষিণ ভারতের চা উৎপাদক অঞ্চল নীলগিরি পর্বত অঞ্চল।



কফি :


◾ দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক রাজ্য (ভারতের কফির পাত্র) ভারতে কফি চাষে প্রথম স্থানে।

◾ ভারতে সাধারণত রোবাস্টা জাতীয় কফি (অধিক) চাষ হয়। এছাড়া আরবীয় কফি চাষ হয়।

◾ আন্তর্জাতিক বাজারে কফির মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতিকে বলা হয় ভ্যালেরাইজেশন।

◾ অধিকাংশ কফি রপ্তানি করা হয় চেন্নাই বন্দরের মাধ্যমে।

◾ দক্ষিণ ভারতের নীলগিরি পার্বত্য অঞ্চল ভারতের প্রধান কফি উৎপাদক অঞ্চল।



জোয়ার :


◾ তামিলনাড়ুতে জোয়ার শস্য চোলাম নামে পরিচিত।



বাজরা :


◾ দক্ষিণ ভারতে বাজরা কে কুম্বু বলে।



রাগী :


◾ রাগী শস্যটি মারুয়া নামেও পরিচিত।




ভারতীয় কৃষি পদ্ধতি :


১) স্থানান্তরিত কৃষি বা ঝুমচাষ :


সাধারণত বনভূমি অঞ্চলে বসবাসকারী আদিম অধিবাসীগণ কোনো স্থানের জঙ্গল পুড়িয়ে জমি পরিষ্কার করে পরপর দুই-তিন বছর প্রাচীন পদ্ধতিতে ফসল চাষ করত। আবার কয়েক বছর সেই স্থান ত্যাগ করে অপর কোনো স্থানে একই পদ্ধতিতে জঙ্গল পুড়িয়ে ফসল চাষ করার নামই স্থানান্তরিত কৃষি বা ঝুমচাষ।



স্থানান্তর কৃষির বিভিন্ন নাম :


১) ভারতের স্থানান্তর কৃষির বিভিন্ন নাম -


A) উত্তর -পূর্ব ভারত - ঝুম বা জুম

B) মধ্যপ্রদেশ ও ছত্রিশগড় - মশান, বেওয়ার

C) ওড়িশা ও অন্ধ্রপ্রদেশ - পোডু

D) কেরালা - পোনম


২) শ্রীলঙ্কা - চেনা

৩) মায়ানমার - টাঙ্গিয়া

৪) বাংলাদেশ - ঝুম

৫) থাইল্যান্ড - তামরাই, সুইডেন

৬) ইন্দোনেশিয়া - হুমা

৭) মালয়েশিয়া - লাডাং

৮) ফিলিপিনস - কেইনজিন

৯) ভেনেজুয়েলা - কোনুকো

১০) ব্রাজিল - রোকা বা রোসা

১১) মেক্সিকো ও পানামা - মিলপা

১২) কঙ্গো গণপ্রজাতন্ত্র - মালোলে বা মাসোল



২) প্রগাঢ় কৃষি/নিবিড় কৃষি :


পৃথিবীর যে সব দেশে লোকসংখ্যার তুলনায় কৃষিজমির পরিমাণ কম, সেইসব দেশে অধিক শ্রম ও মূলধন বিনিয়োগ করে সর্বাধিক ফসল উৎপাদনের যে কৌশল গ্রহণ করা হয় তাকে প্রগাঢ় বা নিবিড় কৃষি বলে। নিবিড় কৃষির মুখ্য ফসল হলো ধান। নিবিড় কৃষির মাথাপিছু উৎপাদন কম।



ব্যাপক কৃষি :


পৃথিবীর যে সব দেশে লোক সংখ্যার তুলনায় কৃষি জমির পরিমাণ বেশি, সেই সব দেশে অল্প শ্রম ও প্রচুর মূলধন বিনিয়োগ করে, যন্ত্রপাতির সাহায্যে যেসব ফসল উৎপাদনের কৌশল গ্রহণ করা হয়, তাকে ব্যাপক কৃষি বলে।



আর্দ্র কৃষি :


যে সমস্ত অঞ্চলে বছরে 200 সেমির বেশি বৃষ্টিপাত হয় সেই সমস্ত অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভর করে আর্দ্র কৃষি গড়ে উঠেছে। হিমালয়ের পূর্বাংশ, আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা প্রভৃতি অঞ্চলে আর্দ্র কৃষি পরিলক্ষিত হয়।



সেচন কৃষি :


যে সমস্ত অঞ্চলে সারা বছর নদী, পুকুর, জলাশয়, ভূগর্ভ হতে জলের যোগান স্বচ্ছ পরিমাণে পাওয়া যায়, সেই সমস্ত অঞ্চলে জলের উপর নির্ভর করে যে কৃষিকাজ করা হয় তাকে সেচন কৃষি বলে।



ধাপ চাষ :


ভারতের পাহাড়ি অঞ্চল এবং হিমালয়ের ঢাল বরাবর এই প্রকার কৃষিকাজ করা হয়। পাহাড়ের ঢালকে সমতলীকরণ করে সিঁড়ির মতো ধাপে ধাপে এই প্রকার কৃষিকাজ করা হয়।



জৈব চাষ :


এই চাষের ক্ষেত্রে কৃত্রিম বা রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় না। শুধুমাত্র জৈব উপাদানগুলি ব্যবহার করা হয়। এই চাষে ঐতিহ্য এবং নব প্রবর্তিত পদ্ধতির সমাহার লক্ষ্য করা যায়।




কৃষি সম্পর্কিত অধ্যয়ন :


অধ্যয়ন কৃষির বিভিন্ন ক্ষেত্র
ফ্লোরিকালচার (Floriculture) ফুলের বাণিজ্যিক চাষ
হর্টিকালচার (Horticulture) ঔষধি উদ্ভিদ, ফল, শাকসবজি, ঘাস ও শোভাবর্ধনকারী গাছের বাণিজ্যিক চাষ
ওলেরিকালচার (Olericulture) বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে শাকসবজি চাষ
ভিটিকালচার (Viticulture) আঙুর চাষের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত
মোনোকালচার (Monoculture) কোন একটি এলাকায় একক শস্য চাষ
মিশ্র চাষ (Mixed Farming) খাদ্যশস্য চাষ ও তার সাথে পশুপালন করার পদ্ধতি
সেরিকালচার (Sericulture) সিল্ক কিটের চাষ ও তার থেকে সিল্ক উৎপাদন
সিলভিকালচার (Silviculture) অরণ্য থেকে আকাঙ্ক্ষিত ফলাফল লাভের জন্য কলা ও বিজ্ঞানের দ্বারা ব্যবস্থাপনা
বাগিচা ফসলের চাষ (Plantation Farming) এটি একপ্রকার বাণিজ্যিক চাষ, যেখানে খাদ্যগুলিকে বিক্রয় করা হয় লাভ করার জন্য
ট্রাক ফার্মিং (Truck Farming) দূরবর্তী বাজারে বিক্রয়ের জন্য কোন বিশেষ শাকসবজি বৃহৎ মাত্রায় চাষ করার পদ্ধতি
নোমাডিক হার্ডিং (Nomadic Herding) চারণ ভূমির খোঁজে গবাদি পশু নিয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থান পরিবর্তন করা
ট্রান্সহিউম্যানস (Transhumance) ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে গবাদি পশুদের নিয়ে এক চারণভূমি থেকে অন্য চারণ ভূমিতে নিয়ে যাওয়া, শীতকালে নিম্নভূমিতে এবং গ্রীষ্মকালে উচ্চভূমিতে স্থানান্তরিত করা হয়
অ্যাকোয়াকালচার (Aquaculture) জলজ প্রাণী যেমন মাছ এবং খাবার জন্য জলজ উদ্ভিদের চাষকে অ্যাকোয়াকালচার বলে




ভারতের বিভিন্ন কৃষি সংক্রান্ত বিপ্লব :


বিপ্লবের নাম সম্পর্কিত ক্ষেত্র
সবুজ বিপ্লব খাদ্যশস্যের (গম, ধান) উৎপাদন বৃদ্ধিকে সবুজ বিপ্লব বলা হয়।
শ্বেত বিপ্লব দুধের উৎপাদন বৃদ্ধিকে শ্বেত বিপ্লব বলা হয়।
হলুদ বিপ্লব ভোজ্য তেলের (সরিষা তেল) পরিমাণ বিপুল হারে বৃদ্ধি পাওয়াকে হলুদ বিপ্লব বলা হয়।
নীল বিপ্লব মৎসের উৎপাদন দ্রুত হারে বৃদ্ধি পাওয়াকে নীল বিপ্লব বলা হয়।
গোলাপি বিপ্লব চিংড়ি ও পেঁয়াজ উৎপাদনের বিপুল পরিমাণ বৃদ্ধিকে গোলাপি বিপ্লব বলা হয়।
বাদামি বিপ্লব চামড়া, কফি ও অপ্রচলিত শক্তি উৎপাদনের বৃদ্ধিকে বাদামি বিপ্লব বলা হয়।
কৃষ্ণ বিপ্লব খনিজ দ্রব্য (বিশেষত খনিজ তেল) উৎপাদন বৃদ্ধিকে কৃষ্ণ বিপ্লব বলা হয়।
সোনালী তন্তু বিপ্লব পাট উৎপাদন বৃদ্ধিকে সোনালী তন্তু বিপ্লব বলা হয়।
সোনালী বিপ্লব উদ্যানপালন উন্নয়ন/মধু উৎপাদন বৃদ্ধিকে সোনালী বিপ্লব বলা হয়।
লাল বিপ্লব মাংস/টমেটোর উৎপাদন বৃদ্ধিকে লাল বিপ্লব বলা হয়।
গোলক বিপ্লব আলু উৎপাদন বৃদ্ধিকে গোলক বিপ্লব বলা হয়।
রুপোলি তন্তু বিপ্লব তুলো উৎপাদন বৃদ্ধিকে রুপোলি তন্তু বিপ্লব বলা হয়।
রুপোলি বিপ্লব ডিম/পোলট্রি উৎপাদন বৃদ্ধিকে রুপোলি বিপ্লব বলা হয়।
ধূসর বিপ্লব সার উৎপাদন বৃদ্ধিকে ধূসর বিপ্লব বলা হয়।




ভারতের কৃষি সংক্রান্ত বিপ্লব ও জনক :


বিপ্লবের নাম জনক
সবুজ বিপ্লব ড. এম এস স্বামীনাথন
চিরসবুজ বিপ্লব ড. এম এস স্বামীনাথন
শ্বেত বিপ্লব ড. ভার্গিস ক্যুরিয়েন
হলুদ/পীত বিপ্লব স্যাম পিত্রোদা
গোলাপি বিপ্লব দুর্গেশ প্যাটেল
স্বর্ণালি বিপ্লব নির তুতেজ



ভারতের বিভিন্ন কৃষি-গবেষণা কেন্দ্রের তালিকা :


গবেষণাগার অবস্থান
Indian Council of Agricultural Research (ICAR) নিউ দিল্লি (দিল্লি)
National Diary Research Institute (NDRI) কারনাল (হরিয়ানা)
Botanical Survey of India (BSI) কলকাতা (পশ্চিমবঙ্গ)
Central Research Institute for Jute and Allied Fibres (CRIJAF) ব্যারাকপুর (পশ্চিমবঙ্গ)
Central Institute for Research on Goats (CIRG) মথুরা (উত্তরপ্রদেশ)
Indian Institute of Sugarcane Research (IISR) লখনৌ (উত্তরপ্রদেশ)
Central Institute for Research on Cotton Technology (CIRCOT) মুম্বাই (মহারাষ্ট্র)
Central Poultry Development Organisation বেঙ্গালুরু (কর্ণাটক)
Central Sericulture Research and Training Institute মহীশূর (কর্ণাটক)
Central Coffee Research Institute (CCRI) চিকম্যাগালোর (কর্ণাটক)
Central Leather Research Institute (CLRI) চেন্নাই (তামিলনাড়ু)
Central Potato Research Institute (CPRI) সিমলা (হিমাচল প্রদেশ)
Tockdal Experimental Station (চা গবেষণা কেন্দ্র) টোকলাই (জোড়হাট-অসম)
Rubber Research Institute of India কোট্টায়াম (কেরল)
Central Tobacco Research Institute রাজামুন্দ্রি (অন্ধ্রপ্রদেশ)
Central Rice Research Institute (CRRI) কটক (ওড়িশা)
Chinsurah Rice Research Centre চুঁচুড়া (পশ্চিমবঙ্গ)
Indian Institute of Spices Research (IISR) কোঝিকোড় (কেরল)
National Dairy Development Board আনন্দ (গুজরাত)
Coconut Research Station বলরামপুর (কেরল)
Central Marine Fisheries Research Institute কচি (কেরল)
Central Inland Fisheries Research Institute ব্যারাকপুর (পশ্চিমবঙ্গ)
Sugarcane Breeding Institute কোয়েম্বাটোর (তামিলনাড়ু)
Defence Food Research Laboratory মহীশূর (কর্ণাটক)
Indian Agriculture Research institute (IARI) পুসা, নিউ দিল্লি (দিল্লি)




ভারতীয় কৃষির সমস্যা ও সমাধান :


ভারতীয় কৃষির সমস্যা :


ভারতের কৃষির অনেকগুলি সমস্যা আছে। এই সমস্যাগুলি হল -


১) মৌসুমী বৃষ্টিপাতের উপর অধিক নির্ভরশীলতা :

ভারতে কৃষিকাজ মৌসুমী বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভরশীল। কারণ ভারতে বেশির ভাগ ফসলই মৌসুমী বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভর করে উৎপন্ন হয়। কিন্তু বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভারতে মৌসুমি বৃষ্টি সময়মতো হয় না। তাই কৃষি উৎপাদনও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।


২) হেক্টরপ্রতি ফসল উৎপাদন কম :

ভারতে কৃষিতে হেক্টর প্রতি ফসলের উৎপাদন কম। এর কারণগুলির মধ্যে রয়েছে সীমিত সেচ, উচ্চ ফলনশীল বীজের অভাব, আধুনিক কৃষি পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণার অভাব ইত্যাদি।


৩) মাথাপিছু কৃষিজমির পরিমাণ কম :

ভারতে মাথাপিছু কৃষি জমির পরিমাণ মাত্র ০.৩ হেক্টর কিন্তু উন্নত দেশগুলিতে মাথাপিছু কৃষি জমির পরিমাণ প্রায় ১১ হেক্টর। ছোট কৃষিজমিতে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি প্রয়োগ করা কঠিন। ফলে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।


৪) ভূমিক্ষয় :

অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পশুচারণ, অনিয়ন্ত্রিতভাবে গাছ কাটার কারণে প্রতিবছর কৃষিজমি থেকে বিপুল পরিমাণ উর্বর মাটি ক্ষয় হচ্ছে। এতে কৃষি জমির উর্বরতা কমে যায়, যার কারণে কৃষি উৎপাদন কমে যায়।


৫) কৃষি শিক্ষার অভাব ও দারিদ্র্য :

কৃষকদের কৃষি শিক্ষার অভাব, কুসংস্কার ইত্যাদির কারণে অধিকাংশ কৃষকই অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কৃষিকাজ করে থাকেন। কৃষি জমির প্রকৃতি ও প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা না করে রাসায়নিক সার, কীটনাশক ইত্যাদির অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের ফলে মাটি দূষিত হয়। এছাড়াও অধিকাংশ কৃষক খুবই দরিদ্র এবং তারা কৃষিতে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করতে পারে না। ফলে কৃষি উৎপাদন কমে যায়।


৬) প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতির অভাব :

ভারতের কৃষিক্ষেত্রে প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং প্রয়োগের অভাব রয়েছে। গবেষণাগারের অভাব থাকার ফলে উন্নত যন্ত্রপাতি, হাইব্রিড বীজ, উন্নত সার ইত্যাদির ব্যবহার সীমিত। এর ফলে কৃষি থেকে মাথাপিছু উৎপাদন কম হয়।


৭) হিমঘরের অভাব :

ভারতীয় কৃষিতে আরেকটি বড় সমস্যা হল ফসল সংরক্ষণের অভাব। সঠিক ও প্রয়োজনীয় হিমঘরের অভাব এবং সংরক্ষণ সংক্রান্ত প্রযুক্তির অভাব কৃষিতে সমস্যার সৃষ্টি করে।



ভারতীয় কৃষির সমস্যার সমাধানে গৃহীত ব্যবস্থা :


ভারতের কৃষির সমস্যার সমাধানে গৃহীত ব্যবস্থাগুলি হল-


১) হেক্টরপ্রতি ফসল উৎপাদন বাড়ানো :

কৃষিতে হেক্টর প্রতি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সেচ সম্প্রসারণ, উচ্চ ফলনশীল বীজ, রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার বাড়াতে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।


২) সমবায় প্রথায় চাষ :

যেহেতু কৃষকদের মাথাপিছু জমির পরিমাণ কম, তাই ওই সব খন্ড খন্ড কৃষি জমিকে একত্রিত করে সমবায় প্রথায় কৃষিকাজ করলে ফসলের উৎপাদন বাড়বে।


৩) কৃষি শিক্ষা ও কৃষি ঋণের ব্যবস্থা :

ভারতের অধিকাংশ কৃষক খুবই দরিদ্র এবং তারা বেশিরভাগই অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করে ফসল উৎপাদন করে। তাই কৃষি ঋণের ব্যবস্থা, কৃষি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ইত্যাদির মাধ্যমে এসব সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে।


৪) ভূমিক্ষয় প্রতিরোধ :

ভূপ্রকৃতির স্থানীয় বৈশিষ্ট্য অনুসারে সমোন্নতি রেখা বরাবর চাষ, ধাপ চাষ, ফসল চাষ, গালি চাষ প্রভৃতির মাধ্যমে চাষ করলে ভূমিক্ষয় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।


৫) ভূমিসংস্কার নীতির যথার্থ প্রয়োগ :

ভারতে অল্প কিছু মানুষের হাতে অধিকাংশ কৃষিজমির মালিকানা স্বত্ব আছে। এইজন্য যথার্থ ভূমিসংস্কার নীতি প্রণয়ন ও প্রয়োগ করে ভূমিহীন ও বর্গাদার কৃষকদের মধ্যে সুষ্ঠুভাবে জমি বিলি বন্টনের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।


৬) ন্যায্য মূল্যে ফসল কেনার ব্যবস্থা :

কৃষকরা যাতে উৎপাদিত ফসল স্বল্প মূল্যে মহাজন ও ফেরেদের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য না হয়, তাই সরকারি স্তরে ন্যায্য মূল্যের দ্রুত ফসল কেনার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।



Post a Comment

0 Comments

Top Post Ad

Bottom Post Ad