প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের উপাদান - প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনায় লিপি ও মুদ্রার গুরুত্ব
![]() |
প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের উপাদান - লিপি ও মুদ্রার গুরুত্ব |
এই পাঠের আলোচ্য বিষয় প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের উপাদান - প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনায় লিপি ও মুদ্রার গুরুত্ব। ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসাবে প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনায় লিপির গুরুত্ব এবং প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনায় মুদ্রার গুরুত্ব ছিল অপরিসীম।
❖ প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের উপাদান কি কি?
প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের উপাদান গুলি মূলত দুইভাগে বিভক্ত।
১) প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান - ইতিহাসের প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানগুলি হ'ল প্রাচীন শিলালিপি, মুদ্রা, স্থাপত্য-ভাস্কর্য নিদর্শন এবং ঐতিহাসিক ধ্বংসাবশেষ। প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানের নির্ভরযোগ্যতা অনেক বেশি, কারণ এখানে ভুল তথ্য সরবরাহের সম্ভাবনা প্রায় থাকে না।
২) সাহিত্যিক উপাদান - সমসাময়িক ইতিহাসবিদদের রচনা এবং অন্যান্য সম্পর্কিত সাহিত্যকর্ম মূলত ইতিহাসের সাহিত্যের উপাদান। সাহিত্য সামগ্রীর নির্ভরযোগ্যতা সম্পর্কে সন্দেহ থেকেই যায়, কারণ ভুল তথ্য বা অনিচ্ছাকৃত তথ্যের অবকাশ রয়েছে।
❖ প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান - Archaeological Evidences
✪ প্রত্নতত্ত্ব শব্দটির উৎস ইংরেজি প্রতিশব্দ 'Archaeology' থেকে যার উদ্ভব গ্রিক শব্দ 'Arkhailogia' থেকে যার অর্থ হল অতীতের বস্তু সম্বন্ধীয় আলোচনা চর্চা। 'প্রত্ন' শব্দের অর্থ হল প্রাচীন বা পুরোনো।
✪ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিষ্কারের তিনটি পদ্ধতি হল -
১) সমীক্ষা
২) উৎখনন
৩) বিশ্লেষণ
✪ সাধারণত উৎখননের পদ্ধতি দুটি। যথা:-
১) উলম্ব বা খাড়াখাড়ি (Vertical)
২) অনুভূমিক বা আড়াআড়ি (Horizontal)
✪ মধ্যপ্রস্তর যুগের প্রত্নক্ষেত্র রাজস্থানের বাগোর এবং তাম্রপ্রস্তর যুগের হরপ্পা ও মহেঞ্জোদাড়োর উৎখননকার্য পরিচালিত হয় অনুভূমিক পদ্ধতির মাধ্যমেই।
✪ ভগ্নাবশেষ বা মাটির নিচে খনন কার্যের ফলে প্রাপ্ত যেসব নিদর্শনগুলি থেকে প্রাচীন সভ্যতার অজানা তথ্য জানতে পারা যায়, সেগুলিকে প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান বলে।
✪ ভারতীয় প্রত্নতত্ত্বের ক্ষেত্রে বুকানন হ্যামিল্টন, কানিংহাম, স্যার জেমস প্রিন্সেপ, স্যার জন মার্শাল, রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, ভগবানলাল ইন্দ্রজী প্রমুখ প্রত্নতত্ত্ববিদদের নাম উল্লেখযোগ্য।
✪ প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানকে 'প্রাচীন ভারত ইতিহাসের প্রধান নোঙর' নামে অভিহিত করা হয়।
✪ ভারতে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা হলেন - স্যার জন মার্শাল।
✪ ভারতে প্রত্নতত্ত্বের জনক হলেন - আলেকজান্ডার ক্যানিংহাম।
✿ প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনায় লিপির গুরুত্বঃ
✪ লিপি উৎকীর্ণবিদ্যাকে বলা হয় - 'এপিগ্রাফি' (Epigraphy)।
✪ লিপির অনুশীলন কে বলা হয় - 'প্যালিওগ্রাফি' (Palaeography)।
✪ লিপি বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে সেগুলি হল - শিলালিপি, তাম্রলিপি, গুহালিপি, স্তম্ভলিপি ইত্যাদি।
✪ ভারতের প্রাচীনতম তাম্রলেখ হল - খ্রিঃ পূঃ তৃতীয় শতকের পূর্বে উৎকীর্ণ সোহগের তাম্রলেখ।
✪ প্রাচীনকালের লিপিগুলি যে ভাষায় লেখা হত সেগুলির মধ্যে অন্যতম - পালি, প্রাকৃত, সংস্কৃত, কানাড়ি, তামিল, মালায়ালাম, তেলেগু প্রভৃতি। ভারতের প্রাচীনতম লিপি হল - সিন্ধি লিপি (অপঠোদ্ধৃত)।
✪ ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বাপেক্ষা প্রাচীনতম পাঠোদ্ধার করা লেখটি হল অশোকের লেখ। ১৮৩৭ খ্রিঃ কলকাতা টাকশালের কর্মী ও এশিয়াটিক সোসাইটি অফ বেঙ্গলের সম্পাদক স্যার জেমস প্রিন্সেপ সর্বপ্রথম ব্রাহ্মী ও খরোষ্ঠী লিপির পাঠোদ্ধার করেন।
✪ সিন্ধিলিপির (Pictography) লেখনিকাল - আনুমানিক ২৫০০ খ্রিঃ পূঃ এবং এর বর্ণ বা অক্ষর সংখ্যা - সম্ভাব্য ২৭০ টি বর্ণ। সান্ধিলিপি পাঠোদ্ধারে অসমর্থ হন - লিপি বিশেষজ্ঞ ফাদার হেরাস।
✪ প্রাচীন ভারতের প্রধানতম লিপি ব্রাহ্মী। এটি ভারতীয় উপমহাদেশের সমস্ত দেশীয় বর্ণমালার আদি জননী। যার অন্যতম কন্যা বঙ্গলিপি।
✿ লিপি সম্পর্কিত ঐতিহাসিকদের মতামতঃ
❍ ভিনসেন্ট স্মিথ: "প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাসের উপাদান হিসাবে লিপি সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বপ্রধান স্থানের অধিকারী।"
❍ ঐতিহাসিক ফ্লিট: "মুদ্রা, ভাস্কর্য, স্থাপত্য, ঐতিহ্য ও সাহিত্য থেকে আমরা যেসব বিবরণ পায়, তার সত্যতা নির্ণয় করতে শিলালিপি আমাদের যথেষ্ট সাহায্য করে।"
❍ ডঃ রমেশচন্দ্র মজুমদার: "এটা প্রমাণিত যে প্রাচীন ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাস পুনর্গঠনে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ উৎস হল প্রাচীন লিপি বা লেখন।"
❍ অধ্যাপক রেপসন: প্রাচীন লিপি থেকে একটি দেশ ও যুগের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি পাওয়া যায়।
✿ লিপি সম্পর্কিত তথ্যসমূহঃ
❑ হাতিগুম্ফা শিলালিপি থেকে খ্রিঃ পূঃ ৪৫০ অব্দ পর্যন্ত ভারতের বংশানুক্রমিক ইতিহাস জানা যায়।
❑ জুনাগড় শিলালেখটি সংস্কৃত ভাষায় এবং গদ্যে রচিত। একে 'প্রশস্তি'ও বলা হয়।
❑ তেখ্ব্-ই-বাহি শিলালিপিতে পার্থিয়ারাজ গন্ডোফার্নিসের বিজয়গাথা লিপিবদ্ধ আছে।
❑ এলাহাবাদ স্তম্ভ লেখটি এলাহাবাদ দুর্গে সংরক্ষিত আছে।
❑ উদয়গিরি ও সাঁচী লিপি থেকে দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের শক বিজয় ও অন্যান্য বিজয় কাহিনী জানতে পারা যায়।
❑ ভিতারি স্তম্বলিপি থেকে হুণদের আক্রমণ এবং তাদের বিরুদ্ধে স্কন্দগুপ্তের সাফল্যের কথা জানা যায়।
❑ পেশোয়ার সম্পট লেখটি ডঃ স্পুনারের নেতৃত্বে খননকার্যের সময় পাওয়া গেছে। এটি একটি দানপত্র। প্রথম কনিষ্ক এটি সর্বাস্তিবাদী আচার্যদের জন্য দান করেন।
❑ নাসিক লেখটি গৌতমীপুত্র সাতকর্ণীর রাজত্বের ১৮তম বর্ষে উত্তীর্ণ হয়।
❑ বেলবা তাম্রশাসনে বিদ্রোহী কৈবর্ত দের হাত থেকে পিতৃরাজ্যে বরেন্দ্রভূমি উদ্ধারের জন্য প্রশংসিত হয়েছেন প্রথম মহীপাল।
❑ খলিমপুর তাম্রশাসনে স্থানীয় সামন্ত রাজাদের ওপর ধর্মপালের কর্তৃত্বের কথা এবং সেই সময়কার রাজকর্মচারীদের পদ ও মর্যাদার বিবরণ লেখা হয়েছে।
❑ সোহগের তাম্রলিপি সম্রাট অশোকের জন্মের প্রায় ৫০ বছর পূর্বে রচিত।
❑ ভারত সম্বন্ধে লেখা প্রথম বিদেশি লেখ বা লিপিটি হল এশিয়া মাইনরে প্রাপ্ত বোখাজকোই লেখ।
Read This: ভারতীয় ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ শিলালিপি গুলির তালিকা
✿ প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনায় মুদ্রার গুরুত্বঃ
✪ খ্রিঃ পূঃ পঞ্চম-ষষ্ঠ শতক, ভারতের মুদ্রা ব্যবহারের পুরাকাল রূপে পরিগণিত হয়, যা মূলত ছাপা যুক্ত মুদ্রা বা Punch Marked Coin হিসাবে প্রচলিত। মুদ্রার অনুরূপ প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতার মূল্যবান দলিল হল - সিলমোহর।
✪ শাসকের নাম ও প্রতিকৃতি সম্বলিত মুদ্রা প্রথম চালু করেন ব্যাকট্রিক গ্রিকরাজা মিলিন্দ বা মিনান্দার।
✪ মুদ্রার পঠন-পাঠন কে ইংরেজিতে বলা হয় - নিউমিসমেটিকস্ (Numismatics)।
✪ ভারতের প্রাচীনতম মুদ্রা রূপে অভিহিত করা হয় - ১৯২৪ খ্রিঃ তক্ষশিলার ভীরমাউন্ডে প্রাপ্ত ছাপযুক্ত মুদ্রাসমূহ।
✪ ভারতে প্রথম সার্থক স্বর্ণমুদ্রা চালু করেন - কুষাণরা (দ্বিতীয় কদফিসিস) তবে ইন্দো-গ্রিক রাজারা প্রথম সোনার মুদ্রা ভারতে চালু করেন। ভারতে প্রথম সিসার মুদ্রা চালু করেন - মৌর্য রাজারা।
✪ মুদ্রা থেকে জ্ঞাতব্য বিষয় সমূহ হল রাজার নাম, রাজত্বকাল, বংশ পরিচয়, প্রচলিত ভাষা, ধর্ম, সন, তারিখ, দেবদেবীর মূর্তি, ধাতুর ব্যবহার, অর্থনৈতিক পরিচয়।
✪ ভারতে ব্যাকট্রিয় শাসকগণ গ্রীস দেশের 'ড্রাই স্ট্রাইকিং' পদ্ধতি অনুযায়ী ছাঁচে পিটিয়ে মুদ্রা নির্মাণ পদ্ধতির প্রচলন করেন। ভারতবর্ষে সর্বপ্রথম পাঞ্চমার্ক মুদ্রা দক্ষিণ ভারতে আবিষ্কৃত হয়েছে।
✪ ভারতীয় কুষাণদের প্রস্তুত করা যেসব মুদ্রা পাওয়া গেছে তার মধ্যে কুজুল কদফিসেস-এর প্রচলন করা তাম্রমুদ্রাই সবচেয়ে প্রাচীন।
✪ ডিমেট্রিয়াস ভারতে চৌকো তামার মুদ্রা প্রবর্তন করেন।
✪ কৃষ্ণল ছিল ওজনের একক যার ওজন ছিল একরতি। 'শতমান' ছিল এক ধরনের সোনার বাট, একশত কৃষ্ণলে একটি শতমান হত।
✪ অর্থশাস্ত্র থেকে জানা যায় যে, সরকারি টাকশালে প্রস্তুত রৌপ্যমুদ্রা 'পণ' এবং তাম্রমুদ্রা 'মাশক' নামে পরিচিত ছিল। পশ্চিম ভারতে রৌপ্য মুদ্রা 'কার্যাপন' নামে পরিগণিত হত। মনা ছিল প্রাচীন ব্যাবিলনের মুদ্রা।
✪ মৌর্য যুগে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে দারিখ বা দ্রাক্ষমা নামে পারসিক বা গ্রিক মুদ্রা ব্যবহার করা হয়।
✿ মুদ্রার ইঙ্গিতবাহী প্রতিকৃতি সমূহ - The Symbols of Coins and their Significance
কার/কাদের মুদ্রা? | অঙ্কিত প্রতিকৃতি | কিসের ইঙ্গিত বহনকারী? |
---|---|---|
সমুদ্রগুপ্ত | বিনাবাদনরত ছবি | সঙ্গীত বিষয়ে পারদর্শীতার প্রমান |
সমুদ্রগুপ্ত | ঘোড়ার ছবি | অশ্বমেধযজ্ঞ করেছিলেন |
গুপ্তরাজা প্রথম চন্দ্রগুপ্ত | লক্ষ্মীদেবীর প্রতিকৃতি | ওই দেবীর অনুরাগী ছিলেন |
কুষাণরাজা | শিব ও বৃষের ছবি | রাজন্যবর্গ শৈব ছিলেন |
সাতবাহন রাজাগণ | দুই মাস্তুল যুক্ত জাহাজের ছবি | সামুদ্রিক বাণিজ্যে আগ্রহী ছিলেন |
গুপ্ত সম্রাটগণ | গরুড়ধ্বজের চিত্র | বৈষ্ণব ধর্মের প্রতি অনুরাগ |
মগধ সাম্রাজ্য | মানুষ, পশু ও পাখি | ━ |
মৌর্য মুদ্রা | সূর্যের চিহ্ন | মৌর্য সার্বভৌমত্ব বোঝাতে (কোশাম্বী) |
মৌর্য মুদ্রা | আধখানা চাঁদের মূর্তি | মৌর্য বংশের প্রতীক (কোশাম্বী) |
✿ প্রাচীন মুদ্রার পরিচয় - Description of Ancient Coins
মুদ্রার নাম | কোন সময়/কাদের মুদ্রা | ব্যবহৃত ধাতু |
---|---|---|
নিষ্ক | ঋগ্ বৈদিক যুগ ও পরবর্তী বৈদিক যুগ | স্বর্ণখন্ড |
মনা | ঋগ্ বৈদিক যুগ | স্বর্ণখন্ড |
কৃষ্ণল | পরবর্তী বৈদিক যুগ | স্বর্ণখন্ড |
সুবর্ণ | মৌর্য যুগ/গুপ্তযুগ | স্বর্ণ |
কার্ষাপণ | মৌর্য যুগ | তাম্র/রৌপ্য/স্বর্ণ |
দারিক বা দ্রাক্ষমা (পারসিক) | মৌর্য যুগ | বৈষ্ণব ধর্মের প্রতি অনুরাগ |
মগধ সাম্রাজ্য | মানুষ, পশু ও পাখি | ━ |
মৌর্য মুদ্রা | সূর্যের চিহ্ন | মৌর্য সার্বভৌমত্ব বোঝাতে (কোশাম্বী) |
মৌর্য মুদ্রা | আধখানা চাঁদের মূর্তি | মৌর্য বংশের প্রতীক (কোশাম্বী) |
More Important GK | Link |
---|---|
GK Questions in Bengali for WBP Exam | Click Here |
Yes bro this is the main project
ReplyDeletePlease do not enter any spam link in the comment box.