প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনার উপাদান হিসেবে সাহিত্যের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করো - দেশীয় সাহিত্য ও বৈদেশিক সাহিত্য
![]() |
প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনার উপাদান হিসেবে সাহিত্যের গুরুত্ব |
প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের উপাদানগুলি মূলত দুই ভাগে বিভক্ত - ১) প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান এবং ২) সাহিত্যিক উপাদান। সাহিত্যিক উপাদানগুলিকে দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে । যেমন— (১) দেশীয় সাহিত্য এবং (২) বৈদেশিক সাহিত্য।
প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনার উপাদান হিসেবে সাহিত্যের গুরুত্ব অপরিসীম। আজকের পাঠে আমরা প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনায় সাহিত্যের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করব।
দেশীয় সাহিত্য (Indigenous Literature)
✿ ধর্মীয় গ্রন্থসমূহ (Religious Books): প্রাচীন ভারতের বেশিরভাগ গ্রন্থের ভিত্তি হল ধর্ম। প্রাচীন ভারতের হিন্দু ধর্ম গ্রন্থ গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল :
♚ বেদ (Vedas)
✾ গ্রন্থের ভাগ/সাহিত্যগত উপাদান-
১) ঋগবেদ, ২) সাম বেদ, ৩) যজুঃ বেদ, ৪) অথর্ব বেদ
✾ সম্পর্কিত তথ্য-
✹ বেদ ভারতের প্রাচীনতম ধর্মগ্রন্থ। প্রতিটি বেদ চার পর্বে সংকলিত - সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক, উপনিষদ।
✹ ঋগবেদ হল সর্বাপেক্ষা প্রাচীনতম। এর রচনাকাল ১৫০০ - ১০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ।
✹ সামবেদের 'সাম' কথাটি 'সমন' শব্দ থেকে উৎপন্ন হয়েছে, যার অর্থ সুর।
✹ ঋগ্, সাম, যজুঃ এই তিনটি বেদকে একসঙ্গে 'ত্রয়ী' বলা হয়।
✹ যজুর্বেদ সংহিতা দুটি ভাষায় বিভক্ত - ১) শুক্ল যজুর্বেদ, ২) কৃষ্ণ যজুর্বেদ।
♚ পুরাণ (Puranas)
✾ গ্রন্থের ভাগ/সাহিত্যগত উপাদান-
১) ব্রহ্মপুরাণ, ২) ভগবৎপুরাণ, ৩) পদ্মপুরাণ, ৪) বিষ্ণুপুরাণ, ৫) অগ্নিপুরাণ, ৬) ব্রহ্মাণ্ড পুরাণ, ৭) গরুড়পুরাণ, ৮) ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ, ৯) শৈব পুরাণ (মতান্তরে বায়ুপুরাণ), ১০) লিঙ্গ পুরাণ, ১১) নারদীয় পুরাণ, ১২) স্কন্ধ পুরাণ, ১৩) মৎস্য পুরাণ, ১৪) মার্কণ্ডেয় পুরাণ, ১৫) কুর্ম পুরান, ১৬) ভবিষ্য পুরাণ, ১৭) বরাহ পুরাণ, ১৮) বামন পুরান
✾ সম্পর্কিত তথ্য-
✹ খ্রিঃ পূর্ব ৬ষ্ঠ শতকের ইতিহাস রচনার জন্য পুরান একটি মূল্যবান/প্রধান উপাদান।
✹ কুরআনের অর্থ পুরাকাহিনি, পরাবৃত্ত।
✹ পুরান বলতে প্রাচীন কাহিনী এবং ধর্মীয় অনুশাসনের সংক্ষিপ্তসারকে বোঝায়।
✹ পুরাণের সংখ্যা ১৮টি।
✹ গুপ্ত যুগের পূর্বে পুরানগুলি সংকলিত হয়নি।
✹ পুরানগুলি একক ভাবে কোন সত্য প্রতিষ্ঠা করতে পারেনা, অন্য উপাদান থেকে সংগৃহীত তথ্যকে সমর্থন করতে পারে মাত্র। তাই ইতিহাসের উপাদান রূপে পুরাণের স্থান গৌণ।
✹ পুরান হতে শিশুনাগ, মৌর্য, নন্দ, শুঙ্গ, কাণ্ব, গুপ্ত প্রভৃতি রাজবংশ ও রাজাদের শাসন করা সম্পর্কে যেমন জানতে পারি তেমনি আবার শক, হুন, আভীর গ্রভিটি বৈদেশিক বর্বর জাতি সম্পর্কে জানা সম্ভব হয়েছে।
✹ পুরান হলো ভারতীয় সংস্কৃতির মূল আধার। ভারতবর্ষকে জানতে হলে পুরাণের সাহায্য অপরিহার্য।
✹ অগ্নিপুরাণ কে বলা যায় ভারতীয় বিদ্যার বিশ্বকোষ বা পৌরাণিক বিশ্বকোষ।
♚ ব্রাহ্মণ (Brahmanas)
✾ গ্রন্থের ভাগ/সাহিত্যগত উপাদান-
১) ঐতরেয় ব্রহ্মণ, ২) কৌষীতকি ব্রহ্মণ, ৩) গোপথ ব্রাহ্মণ, ৪) শতপথ ব্রাহ্মণ, ৫) জৈমিনীয় ব্রাহ্মণ, ৬) তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণ, ৭) পঞ্চবিংশ বা তান্ড্যমহা ব্রহ্মণ, ৮) ছান্দোগ্য ব্রাহ্মণ, ৯) কঠ ব্রাহ্মণ, ১০) ষড়বিংশ ব্রাহ্মণ
✾ সম্পর্কিত তথ্য-
✹ ব্রাহ্মণ গুলি খ্রিঃ পূঃ অষ্টম ও খ্রিঃ পূঃ ষষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ের। এগুলি 'গদ্যে' রচিত।
✹ ব্রাহ্মণগুলিতে মূলত বৈদিক মন্ত্রাদির টীকা ও যাগযজ্ঞের বিধি প্রকরণ গুলি সন্নিবিষ্ট আছে, অর্থাৎ যজ্ঞবিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থ।
✹ ব্রাহ্মণের বিষয়বস্তু দু'ভাগে বিভক্ত - ১) বিধি ও ২) অর্থবাদ।
♚ আরণ্যক (Aranyakas)
✾ গ্রন্থের ভাগ/সাহিত্যগত উপাদান-
১) ঐতরেয় আরণ্যক, ২) কৌষীতকী বা শাংখ্যায়ন আরণ্যক, ৩) আরণ্যক সংহিতা, ৪) জৈমিনীয়, ৫) আরণ্যক গান, ৬) উপনিষদব্রাহ্মণ, ৭) ছান্দোগ্য আরণ্যক, ৮) কঠ, ৯) তৈত্তিরীয়, ১০) শতপথ, ১১) বৃহদারণ্যক
✾ সম্পর্কিত তথ্য-
✹ বেদের ব্রাহ্মণ ভাগের যে অংশে কর্ম এবং জ্ঞানের আধ্যাত্মিক আলোচনা করা হয়েছে তার নাম 'আরণ্যক'।
✹ আরণ্যক আসলে ব্রাহ্মণ গুলির পরিশিষ্ট।
✹ অরন্যের নির্জনতায় বসে দুরূহ বিষয়বস্তু সম্পর্কে ঋষিগণ চিন্তা করতেন। তাই এর নাম হয়েছে আরণ্যক।
✹ আরণ্যক গদ্যে লিখিত। ভাষা সাংকেতিক, সেজন্য এর অন্তর্নিহিত অর্থ বোঝা সহজসাধ্য নয়।
✹ অথর্ববেদের একমাত্র ব্রাহ্মণ 'গোপথ' -এর কোনো আরণ্যক গ্রন্থ নেই অর্থাৎ অথর্ববেদের কোনো আরণ্যক নেই।
✹ সামবেদের একমাত্র প্রসিদ্ধ আরণ্যক 'ছান্দোগ্য'।
♚ উপনিষদ (Upanishads)
✾ গ্রন্থের ভাগ/সাহিত্যগত উপাদান-
১) কঠ বা কাঠক উপনিষদ, ২) কেন বা তলবকার উপনিষদ, ৩) ঈশপনিষদ, ৪) বৃহদারণ্যক উপনিষদ, ৫) ছান্দোগ্য উপনিষদ, ৬) তৈত্তিরীয় উপনিষদ, ৭) শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ, ৮) মান্ডুক্যপনিষদ, ৯) ঐতরেয় উপনিষদ, ১০) কৌষীতকি বা শংখ্যায়ন উপনিষদ, ১১) মুন্ডক উপনিষদ, ১২) প্রশ্ন উপনিষদ, ১৩) মৈত্রায়নীয় উপনিষদ, ১৪) মহানারায়ণ উপনিষদ
✾ সম্পর্কিত তথ্য-
✹ 'উপনিষ' যার অর্থ কারো সন্নিকটে বসা, এই শব্দ থেকে 'উপনিষদ' কথাটির উৎপত্তি।
✹ বুৎপত্তিগত অর্থে গুরুর কাছে/সমীপে (উপ-) এসে তার পদতলে উপবেশন করে (নি-√সদ্) বিদ্যার্থী যে ব্রহ্মবিদ্যা গ্রহণ করতেন তাই উপনিষদ।
✹ আরণ্যকের সারাংশের ওপর ভিত্তি করে যে দার্শনিক চিন্তার উদ্ভব ঘটেছে তাই-ই উপনিষদ নামে সুপরিচিত।
✹ উপনিষদের সংখ্যা মোট প্রায় ২০০-এর বেশি (মুখ্য-১৪টি)।
✹ যেহেতু উপনিষদগুলি বেদের পূর্ণতম পরিণতি এবং সামগ্রিকভাবে এগুলি বেদের শেষাংশ, তাই এর আরেক নাম 'বেদান্ত'।
✹ উপনিষদ গুলির মধ্যে ছান্দোগ্য উপনিষদ সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ।
✹ 'সত্যমেব জয়তে' কথাটি মুণ্ডক উপনিষদ থেকে সংগৃহীত।
✹ উপনিষদ হল আধ্যাত্মবিদ্যা। এর আরেক নাম ব্রহ্মবিদ্যা।
♚ মহাকাব্য (Epics)
❑ মহাভারত (১৮টি পর্ব)
✾ গ্রন্থের ভাগ/সাহিত্যগত উপাদান-
১) আদি পর্ব, ২) সভা পর্ব, ৩) বন পর্ব, ৪) বিরাট পর্ব, ৫) উদ্যোগ পর্ব, ৬) ভীষ্ম পর্ব, ৭) দ্রোন পর্ব, ৮) কর্ণ পর্ব, ৯) শল্য পর্ব, ১০) সৌপ্তিক পর্ব, ১১) স্ত্রী পর্ব, ১২) শান্তি পর্ব, ১৩) অনুশাসন পর্ব, ১৪) আশ্বমেধিক পর্ব, ১৫) আশ্রমবাসিক পর্ব, ১৬) মুষল পর্ব, ১৭) মহাপ্রস্থান পর্ব, ১৮) স্বর্গারোহন পর্ব
✾ সম্পর্কিত তথ্য-
✹ মহাভারতের রচনাকাল খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দী থেকে খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতাব্দীর মধ্যে।
✹ মহাভারত অষ্টাদশ পর্ব ও নব্বই হাজার স্লোক দ্বারা রচিত হয়েছে।
✹ মহাভারত গ্রন্থটির রচয়িতা হলেন ঋষি ব্যাসদেব।
✹ মহাভারতে আর্যদের দুটি প্রধান শাখার মধ্যে তুমুল লড়াই -এর কথা বর্ণিত হয়েছে।
✹ ব্যাসদেবের লেখা বর্তমান মহাভারতে শ্লোক সংখ্যা এক লক্ষ।
✹ মহাভারতের আদি নাম ছিল জয়কাব্য।
✹ মহাভারত তিনটি স্তরে বিভক্ত - (i) সৌত রচনা বা জয়কাব্য - ৮৮০০টি শ্লোক (রচনাকাল ৭০০-৫০০ খ্রিঃ পূঃ) (ii) ব্রাহ্মণ্য রচনা বা ভারত - ২৪,০০০টি শ্লোক (রচনাকাল ৫০০-২০০ খ্রিঃ পূঃ) (iii) শ্রমন দের রচনা বা মহাভারত - ১ লক্ষ্য (রচনাকাল ২০০-৩৫০ খ্রিস্টাব্দ)।
✹ মহাভারত চর্চাই বেদ চর্চার মতোই সুফল মেলে এই বিশ্বাসে মহাভারত কে পঞ্চম বেদ বলা হত।
✹ মহাভারত 'পৃথিবীর দীর্ঘতম কাব্য'।
❑ রামায়ণ (৭টি কান্ড)
✾ গ্রন্থের ভাগ/সাহিত্যগত উপাদান-
১) আদিকাণ্ড, ২) অযোধ্যা কান্ড, ৩) অরণ্য কান্ড, ৪) কিষ্কিন্ধা কান্ড, ৫) সুন্দরা কান্ড, ৬) লঙ্কা কান্ড, ৭) উত্তরা কান্ড
✾ সম্পর্কিত তথ্য-
✹ রামায়ণের রচনাকাল ইয়াকোবি ও ম্যাকডোনেলের মতে, ৮০০-৫০০ খ্রিঃ পূঃ, কীথের মতে, খ্রিঃ পূঃ চতুর্থ শতক, উইন্টার নিৎস এর মতে খ্রিঃ পূঃ তৃতীয় শতক।
✹ রামায়ণ সপ্তকাণ্ড ও চব্বিশ হাজার শ্লোক দ্বারা সমাদৃত।
✹ রামায়ণ গ্রন্থটির রচয়িতা ছিলেন মহর্ষি বাল্মিকী।
✹ রামায়ণের বিষয়বস্তু হল আর্য-অনার্য সংঘাত।
✹ রামায়ণে ৫০০টি অধ্যায়, ৬৬১টি সর্গ রয়েছে।
✹ রামায়ণে ২৪,০০০ শ্লোক থাকায় এর আরেক নাম চতুর্বিংশতি সাহস্রী সংহিতা।
♚ স্মৃতি শাস্ত্র বা ধর্ম শাস্ত্র (Smritis)
✾ গ্রন্থের ভাগ/সাহিত্যগত উপাদান-
১) মনুস্মৃতি, ২) নারদ স্মৃতি, ৩) যাজ্ঞবল্ক্য স্মৃতি, ৪) বৃহস্পতি স্মৃতি, ৫) কাত্যায়ন স্মৃতি, ৬) বিষ্ণু স্মৃতি
✾ সম্পর্কিত তথ্য-
✹ প্রাচীন ভারতে খ্রিঃ পূঃ ২০০ অব্দ থেকে কয়েক শতাব্দী যাবৎ বহু স্মৃতি শাস্ত্র রচিত হয়েছে।
✹ মূলত তদানীন্তন সমাজে দেওয়ানী আইন লিপিবদ্ধকরণের প্রয়োজনে স্মৃতিশাস্ত্র গুলি রচিত হয়।
✹ স্মৃতিশাস্ত্র গুলির মধ্যে মনুস্মৃতি সর্বাপেক্ষা বিখ্যাত ও গুরুত্বপূর্ণ।
✹ স্মৃতিশাস্ত্র থেকে প্রাচীন যুগের সামাজিক রীতিনীতি ও রাষ্ট্রীয় কর্তব্য, সমাজ সংগঠন, জাতিবিচার প্রকৃতি সম্বন্ধে জানতে পারা যায়।
♚ বৌদ্ধ সাহিত্য (Buddhist Litetature)
✾ গ্রন্থের ভাগ/সাহিত্যগত উপাদান-
ত্রিপিটক, জাতক, দীপবংশ, মহাবংশ, (সিংহলি - ইতিবৃত্ত) বুদ্ধচরিত, ললিত বিস্তার, অঙ্গুরিওরনিকায়, অশোকাবদান, দিব্যাবদান, সুন্দরানন্দ কাব্য, মিলিন্দ পঞ্চহো, আর্যমঞ্জুশ্রি - মূলকল্প প্রভৃতি
✾ সম্পর্কিত তথ্য-
✹ প্রাচীনতম বৌদ্ধ গ্রন্থগুলি লেখা হয়েছিল পালি ভাষায়।
✹ পরে প্রাকৃত এবং কুষাণ যুগ থেকে এগুলি সংস্কৃত ভাষায় রচিত হয়।
✹ গৌতম বুদ্ধের পূর্বজন্মচক্র বিষয়ক লোককাহিনী গুলির সংকলন সমূহের নাম জাতক। খ্রিঃ পূঃ পঞ্চম থেকে দ্বিতীয় অব্দের মধ্যবর্তী সময়ের ইতিহাসের উপাদান হিসাবে জাতকের সাক্ষ্য গুরুত্বপূর্ণ।
✹ দীপবংশ ও মহাবংশ থেকে বুদ্ধের জীবনী, চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের জীবন পরিচয় ও অশোকের রাজত্বকাল সম্পর্কিত বহু তথ্য জানা যায়।
✹ প্রায় ৫৪৯টি (মতান্তরে ৫৪৭টি) জাতক কাহিনী সংগৃহীত ও প্রকাশিত হয়েছে।
✹ দীপবংশের লেখক অজ্ঞাত, মহাবংশের রচয়িতা মহানাম।
♚ জৈন সাহিত্য ( Jaina Literature)
✾ গ্রন্থের ভাগ/সাহিত্যগত উপাদান-
পরিবিশিষ্ট পার্বণ, আচারঙ্গ সূত্র, কল্পসূত্র, ভগবতী সূত্র, জৈন আগম বা জৈন সিদ্ধান্ত প্রভৃতি
✾ সম্পর্কিত তথ্য-
✹ জৈনদের সর্বাপেক্ষা প্রাচীনতম গ্রন্থ হল 'পূর্ব' নামক গ্রন্থটি।
✹ জৈন গ্রন্থ গুলি প্রাকৃত ভাষায় রচিত।
✹ ভদ্রবাহু রচিত জৈন কল্পসূত্রে সাধারণভাবে জৈন তীর্থঙ্করদের এবং বিশেষভাবে মহাবীরের জীবনী বর্ণিত হয়েছে।
✹ জৈন ভগবতী সূত্র খ্রিঃ পূঃ ষষ্ঠ শতকের রাজনৈতিক ইতিহাস জানার জন্য প্রয়োজনীয়। এতে ষোড়শ মহাজনপদের নামগুলি উল্লেখ আছে।
✿ ধর্মনিরপেক্ষ গ্রন্থ (Secular Literature): আইন, বিজ্ঞান, জ্যোতির্বিদ্যা, ব্যাকরন প্রভৃতি বিষয়কে আশ্রয় করে যে সকল গ্রন্থগুলি সংকলিত হয়েছে সেগুলিকে আমরা ধর্মনিরপেক্ষ গ্রন্থরূপে বিবেচনা করে থাকি। যথা-
গ্রন্থকার | গ্রন্থের নাম |
---|---|
কৌটিল্য | অর্থশাস্ত্র |
পাণিনি | অষ্টাধ্যায়ী |
পতঞ্জলি | মহাভাষ্য |
গুণাঢ্য | বৃহৎকথা |
শূদ্রক | মৃচ্ছকটিকম |
ভাস | স্বপ্নবাসবদত্তা |
বিশাখদত্ত | মুদ্রারাক্ষস |
বরাহমিহির | বৃহৎসংহিতা |
আর্যভট্ট | সূর্যসিদ্ধান্ত |
বরাহমিহির | পঞ্চসিদ্ধান্তিকা |
ভাস্করাচার্য | সিদ্ধান্ত শিরোমণি |
নাগার্জুন | মাধ্যমিক সূত্র |
বিজ্ঞানেশ্বর | মিতাক্ষরা |
সুশ্রুত | সুশ্রুত সংহিতা |
ব্রহ্মগুপ্ত | ব্রহ্মসিদ্ধান্ত |
চক্রপাণিদত্ত | চিকিৎসা সংগ্রহ |
চরক | চরক সংহিতা |
জীমূতবাহন | দায়ভাগ |
মাধবকার | মাধবনিদান |
গর্গমুনি | গার্গী সংহিতা |
সুরেশ্বর | শব্দ প্রদীপ |
সুরেশ্বর | বৃক্ষায়ুর্বেদ |
✿ জীবনচরিত (Biographies): প্রাচীন যুগে মহাপরাক্রমশালী রাজন্যবর্গ তাদের কীর্তিকলাপ এবং রাজত্বকালের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা লিপিবদ্ধ করে রাখতেন। এটাই জীবনচরিত বা রাজবৃত্ত বা রাজকাহিনী রূপে সুপরিচিত। এই প্রকার গ্রন্থে অনেক সময় অতিশয়োক্তি থাকে।
গ্রন্থকার | গ্রন্থের নাম |
---|---|
বানভট্ট | হর্ষচরিত |
বিহ্লন | বিক্রমাংকদেবচরিত |
সন্ধ্যাকর নন্দী | রামচরিত |
পদ্মগুপ্ত | নবসাহসাঙ্কচরিত |
জয়সিংহ | কুমারপালচরিত |
অশ্বঘোষ | বুদ্ধচরিত |
চাঁদবরদৈ | পৃথ্বিরাজচরিত |
তুলসীদাস | রামচরিত মানস |
আনন্দভট্ট | বল্লালচরিত |
উমাপতি ধর | চন্দ্রচূড়চরিত |
আসসা | বর্ধমানচরিত |
পন্ডিত চতুর্ভুজ | হরিচরিত |
শ্রীহর্ষ | নৈকর্ষচরিত |
ভবভূতি | উত্তররামচরিত |
সমুদ্র গুপ্ত | কৃষ্ণ চরিতম্ |
বাকপতিরাজ | গৌড়বহো |
দণ্ডী | দশকুমারচরিত |
ভবদেব সূরী | পার্শ্বনাথ চরিত |
✿ আঞ্চলিক ইতিহাস (Regional History): প্রাচীন ভারতের আঞ্চলিক বা স্থানীয় গ্রন্থ গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল:
গ্রন্থকার | গ্রন্থের নাম |
---|---|
কলহন | রাজতরঙ্গিনী |
সোমেশ্বর | রাসমালা, কীর্তিকৌমুদী |
অরিসিংহ | সুকৃতি সংকীর্তন |
মেরুতুঙ্গ | প্রবন্ধ চিন্তামণি |
রাজশেখর | প্রবন্ধ কোষ |
সোমদেব ভট্ট | কথাসরিৎ সাগর |
✿ তামিল সাহিত্য (Tamil Literature): তামিল সাহিত্য গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল :
শিলাপ্পাদিকরম ➺ ইলাঙ্গো আদিগল
মনিমেঘলৈ ➺ শীওলৈ শাওনর
কুরাল ➺ ত্রিরুবল্লুবর
তোলাকাপ্পিয়ম (ব্যাকরণ গ্রন্থ) ➺ তোলাকাপ্পিয়ার
তিরুমুরাকাৎ, নেদুলবাদৈ ➺ নক্কিরার
মদুরৈ কাঞ্চী ➺ মাঙ্গুডি মারুদাম
পত্তুপ্পাতু ➺ (১০টি দীর্ঘ কবিতা সংকলন)
ইত্তুতোগোই ➺ (৮ কাব্য সংকলন)
পাদিনেনকিলকবাক্কু ➺ (১৮ কাব্য সংকলন)
বৈদেশিক সাহিত্য (Foreign Literature)
ভারতে আগত বিভিন্ন বিদেশী লেখক, পর্যটক, সাহিত্যিকদের বিবরণ থেকে ভারত সম্পর্কিত যে সকল তথ্য আমরা পেয়ে থাকি সেগুলি বৈদেশিক বিবরণ রূপে অভিহিত করা হয়ে থাকে। বৈদেশিক বিবরণ গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-
গ্রন্থকার | গ্রন্থের নাম |
---|---|
মেগাস্থিনিস | ইন্ডিকা |
স্ট্রাবো | 'ভূগোল' |
প্লিনি | ন্যাচারাল হিস্ট্রি |
সুমা-সিয়েন | 'তাঁর ইতিহাস' |
ফা হিয়েন | ফো-কুয়ো-কিং |
হিউয়েন সাঙ | সি-ইউ-কি |
পলিবায়স | সাধারণ ইতিহাস |
অজ্ঞাতনামা | পেরিপ্লাস অব দ্য |
গ্রিক নাবিক | এরিথ্রিয়ান সী |
জাস্টিন | এপিটোম |
হেকটিয়াস | এ সার্ভে অফ দ্য ওয়ার্ল্ড |
লামা তারনাথ | ভারতে বৌদ্ধধর্মের জন্ম |
লামা তারনাথ | দুলভা, ট্যাঙ্গুর |
প্যান-কু | সিয়েন-হান-শু |
ফ্যান-ইর | হৌ-হান-শু |
ইৎ সিং | কাউ-ফা-কাং-সা |
ডিওডোরাস | বিবলিওথেকা হিস্টোরিকা |
টলেমি | জিওগ্রাফিক হুফেগেসিস |
হেরোডোটাস | হিস্টোরিয়া |
কুইন্টার্স | আলেকজান্ডারের ইতিহাস |
কসমাস ইন্ডিকো প্লয়েস্টস | খ্রীষ্টিয়ান টপোগ্রাফি |
আরিয়ান | আনাবাসিস (অভিযান) |
Please do not enter any spam link in the comment box.