Ads Area

হরপ্পা সভ্যতার ইতিহাস, শিল্প সাহিত্য, বৈশিষ্ট্য, নগর পরিকল্পনা | History of Harappan civilization or Indus civilization in Bengali

হরপ্পা সভ্যতার ইতিহাস, শিল্প সাহিত্য, বৈশিষ্ট্য, নগর পরিকল্পনা | History of Harappan civilization or Indus civilization in Bengali


History of Harappan civilization or Indus civilization in Bengali
History of Harappan civilization or Indus civilization in Bengali

স্যার আলেকজান্ডার কানিংহাম এর মতে, হরপ্পা নামটির উৎপত্তি লোকমুখে প্রচলিত রাজা হরপাল (সপ্তম থেকে অষ্টম শতাব্দী)-এর নাম থেকে এসেছে। আবার কারও মতে, ঋগবেদ বর্ণিত 'হরি-যূপূয়া' নাম থেকেই এ নামের উদ্ভব।

হরপ্পা সভ্যতার সম্পর্কিত অনুচ্ছেদ গুলির মাধ্যমে আমরা হরপ্পা সভ্যতার আবিষ্কারক, হরপ্পা সভ্যতার অবস্থান, হরপ্পা সভ্যতার সময়কাল, হরপ্পা সভ্যতার বৈশিষ্ট্য, হরপ্পা সভ্যতার নগর পরিকল্পনা, হরপ্পা সভ্যতার ধর্মীয় জীবন, হরপ্পা সভ্যতার শিল্পকলা ও কারিগরি শিল্প, হরপ্পা সভ্যতার প্রধান খাদ্যসমূহ, হরপ্পা সভ্যতার গৃহপালিত পশু ও বন্য পশু, হরপ্পা সভ্যতার পোশাক-পরিচ্ছদ, হরপ্পা সভ্যতার প্রধান অলংকার সমূহ, হরপ্পা সভ্যতার দেবদেবী সমূহ, হরপ্পা সভ্যতার পতনের কারণ ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।



হরপ্পা সভ্যতা - The Harappan Civilisation


নামের অর্থ:

হরপ্পা ➙ পশুপতির খাদ্য

মহেঞ্জোদাড়ো ➙ মড়ার ঢিপি/মৃতের স্তুপ 


আবিষ্কারক ও আবিষ্কারের কালসীমা:

১৮২৬ খ্রিঃ চার্লস ম্যাসন হরপ্পা ঢিপির কথা প্রথম পন্ডিতমহলের গোচরে আনেন। এরপর ১৮৫০ খ্রিঃ ও ১৮৭৫ খ্রিঃ ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ আলেকজান্ডার কানিংহাম সর্বপ্রথম সিন্ধু সিলমোহরের সন্ধান পান। কিন্তু এর প্রকৃত গুরুত্ব অনুধাবন করতে ব্যর্থ হন। পরবর্তীকালে পাঞ্জাবের মন্টোগোমারী জেলার হরপ্পায় খনন কার্য চালানো হয় ও প্রত্নক্ষেত্র আবিষ্কার করেন দয়ারাম সাহানী (১৯২১ খ্রিঃ)। সিন্ধু প্রদেশের লারকানা জেলার মহেঞ্জোদাড়োয় খননকার্য চালান ও আবিষ্কার করেন রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯২২ খ্রিঃ)। ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রধান স্যার জন মার্শালের উদ্যোগে প্রধানত এই সভ্যতা আবিষ্কৃত হয়। 


অবস্থান ও বিস্তৃতি:

এই সভ্যতা প্রায় ১৫৫০ কিমি পরিধি সহকারে বিস্তৃত ছিল। পশ্চিমে বেলুচিস্তানের সুৎকাজেনদারো থেকে পূর্বে উত্তরপ্রদেশের মিরাট জেলার আলমগীরপুর পর্যন্ত এবং উত্তরের জম্মুর কাছাকাছি মান্ডা থেকে দক্ষিণের গোদাবরী উপত্যকার মহারাষ্ট্রের দাইমাবাদ পর্যন্ত এর ব্যপ্তি। পূর্ব থেকে পশ্চিমে ১১০০ কিমি এবং উত্তর থেকে দক্ষিনে ১৬০০ কিমি পরিধি নিয়ে হরপ্পা সংস্কৃতি বিস্তৃত ছিল। 


সভ্যতার কালসীমা/প্রাচীনত্ব:

এই সভ্যতার কালসীমা সম্পর্কে সুনিশ্চিতভাবে কিছু বলা যায় না। তবে প্রত্নতত্ত্ববিদ ও নৃতত্ত্ববিদগণ খনন কার্য থেকে প্রাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ঊর্ধ্বতম নিম্নতম কালসীমা নির্ধারণের সচেষ্ট হয়েছেন। হরপ্পা সভ্যতার কালসীমা হিসাবে খ্রিঃ পূর্ব ৩০০০ থেকে খ্রিঃ পূর্ব ১৫০০ অব্দকেই মান্যতা দেওয়া হয়েছে। মোটামুটিভাবে বলা যায় যে, হরপ্পা সভ্যতার 'তাম্রপ্রস্তর যুগের সভ্যতা'। 


সভ্যতার স্রষ্টা:

এটিও যথেষ্ট বিতর্কিত বিষয়। কারো মতে হরপ্পা বা সিন্ধু সভ্যতার স্রষ্টা হলেন আর্যরা, কারো মতে সুমেরীয়রা, কারো মতে দ্রাবিড় জাতি। নৃতাত্ত্বিকরা চারটি গোষ্ঠীর সন্ধান দিয়েছেন। তারা হল- প্রোটো অস্ট্রালয়েড, ভূমধ্যসাগরীয়, আলপাইন ও মোঙ্গলীয়, অনেকের মতে প্রাচীন ভারতের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের স্থানীয় আদি অধিবাসীরা হরপ্পা সংস্কৃতির জন্ম দেয়। 


সভ্যতার কেন্দ্র সমূহ:

বর্তমানে হরপ্পা সভ্যতায় প্রায় ১৫০০ টি কেন্দ্র আবিষ্কৃত হয়েছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ নগর কেন্দ্র গুলি হল হরপ্পা, মহেঞ্জোদাড়ো, চানহুদড়ো, কোটদিজি, রূপার, আলমগীরপুর, লোথাল, রংপুর, রোজদি, সুরকোটরা, কালিবঙ্গান, বনওয়ালি প্রভৃতি। 


প্রধান চারটি নগরী:

হরপ্পা, মহেঞ্জোদাড়ো, লোথাল ও কালিবঙ্গান। 


✹ এটি ছিল নদীমাতৃক সভ্যতা। 


✹ এটি ছিল নগরকেন্দ্রিক সভ্যতা। 


✹যেহেতু সিন্ধুলিপি এখনো পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হয়নি এবং প্রত্নতাত্ত্বিকগণ বিভিন্ন প্রাপ্ত নিদর্শনের উপর ভিত্তি করে এই সভ্যতার বিবরণ লিপিবদ্ধ করেছেন তাই একে প্রাগৈতিহাসিক সভ্যতা বলা হয়। 


উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য সমূহ:

✹ এ যুগের মানুষ লোহার ব্যবহার জানত না। পাথরের হাতিয়ার ও সরঞ্জামের পাশাপাশি তামা, ব্রোঞ্জের ব্যবহার করত। তাই একে 'তাম্রপ্রস্তর যুগের সভ্যতা' বলা হয়। 


✹ এখানে বর্ণবৈষম্য না থাকলেও শ্রেণিবিভক্ত সমাজের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। এখানে তিনটি শ্রেণির অস্তিত্ব ছিল। যথা- ১) শাসকশ্রেণি, ২) ধনী ব্যবসায়ী বা বণিক শ্রেণি, ৩) শ্রমিক, কৃষক ও সাধারণ মানুষ। 


✹ হরপ্পা সভ্যতার ধারকগণ মৃতদেহকে সমাধিস্থ করত। কখনো দাহ করে মৃতদেহের দেহাস্থি মাটির পাত্র করে পুঁতে রাখত। 


✹ স্ত্রী দেবতার পূজা প্রাধান্য পেত। 


✹ সম্ভবত ঘোড়ার ব্যবহার অজানা ছিল। 


✹ নগরের গঠন পরিকল্পনা, পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থা প্রভৃতি সুশৃঙ্খল পৌরশাসনের আভাস দেয়। 


প্রধান বন্দর:

লোথাল (গুজরাট) (বিশ্বের প্রাচীনতম বন্দর)। 


বাণিজ্যিক যোগাযোগ:

সম্ভবত মিশর, মেসোপটেমিয়া, সুমের, আক্কাদ, পারস্য, বেলুচিস্তান, আফগানিস্থান প্রভৃতি অঞ্চল। 


প্রধান খাদ্য সমূহ:

গম, যব, তরিতরকারি, কলাইশুটি, বাদাম, খেজুর, ধান, তিল, তরমুজ, আঙ্গুর, রসুন, নানা রকম ডাল, জোয়ার, বাজরা প্রভৃতি চাষ হত। আমিষ খাদ্য হিসাবে লোকে ভেড়ার মাংস, শুকরের মাংস, পাখির মাংস এবং মাছ আহার করত। 


গৃহপালিত পশু ও বন্যপশু:

ভেড়া, মহিষ, কুঁজওয়ালা ষাঁড়, গরু, কুকুর, ছাগল, বিড়াল, গাঁধা, উট, গন্ডার ও হাতি এবং হরিণ ও বানরের সঙ্গে পরিচিত ছিল। বেলুচিস্তানের মাটির নিচে অতি গভীরে ঘোড়ার চিহ্ন মিললেও ঘোড়া তখনও পোষ মানেনি বলেই মনে করা হয়। খরগোশ, ময়ূর, পায়রা, হাঁস, বাঁদর, বুনোমুরগির সঙ্গেও পরিচিত ছিল। 


পোশাক-পরিচ্ছদ:

সিন্ধু বাসী সুতি ও পশমের বস্ত্র ব্যবহার করত। নারী ও পুরুষ উভয়ই দেহের ঊর্ধ্ব ও নিম্ন অংশের জন্য দুইখণ্ড পোশাক পরত। পোশাকের জন্য তুলা ব্যবহার করা হত। 


প্রধান অলংকার সমূহ:

তামা, ব্রোঞ্জ, সোনা, রুপা ও পাথরের তৈরি নানা ধরনের হার, কানের দুল, চুড়ি, মল, কোমরবন্ধ, কানপাশা, বালা, আংটি ব্যবহার করা হত। মাথার খোপায় সোনা বা হাতির দাঁতের চিরুনি গুঁজে রাখত। 


দেবদেবী সমূহ: 

মাতৃরূপিনী শক্তি পূজা, ধরিত্রী পূজা, যোগীরাজ পশুপতির পূজা ধর্মজীবনের অঙ্গ ছিল। পিপলি বৃক্ষ (বটগাছ), জল, আগুন, নদীকে তারা দেবতা বলে পুজা করত। স্বস্তিক চিহ্ন, চক্র চিহ্ন সূর্য উপাসনার আভাস দেয়, এছাড়া ষাঁড়, হাতি, হরিণ, মহিষ, গণ্ডার, বাঘ, নাগপূজার প্রচলন ছিল। হরপ্পা বাসীরা টোটেম বা প্রতীক পূজায় বিশ্বাসী ছিল। যোনি ও লিঙ্গ পূজা ছিল প্রতীক পূজার উদাহরণ। 


হরপ্পা/সিন্ধুলিপি:

'সিন্ধুলিপি' বা 'হরপ্পা লিপি' ছিল চিত্রলিপি। যদিও এই লিপির সন্তোষজনকভাবে পাঠোদ্ধার এখনও সম্ভব হয়নি তথাপি এই লিপির লিখন পদ্ধতি যে ডানদিক থেকে বামদিকে এবং পরের লাইন বামদিক থেকে ডানদিকে ছিল সে বিষয়ে পণ্ডিতগণ একমত পোষণ করেছেন। এতে ২৭০ টি অক্ষর আবিষ্কৃত হয়েছে। সিন্ধু বা হরপ্পা লিপি এখানকার অধিবাসীদের সাক্ষরতার পরিচায়ক। তবে অতি সম্প্রতি মুম্বাই-এর 'টাটা ইনস্টিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ'-এর প্রধান S.R. Rao ৯০০ টি সিলমোহরের লিপির পাঠোদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন। 


শিল্প:

ধাতু শিল্প (তামা, টিন, ব্রোঞ্জ, সিসা, সোনা, রুপা), মৃৎশিল্প, রঞ্জন শিল্প, কারুশিল্পে সিন্ধুবাসীরা দক্ষ ছিল। 


যানবাহন:

সিন্ধুবাসীরা উট, গাধা, দু চাকা বিশিষ্ট গরু ও ষাঁড়ের গাড়ি, জাহাজ ব্যবহার করা হত। 


অবসর বিনোদন:

নৃত্যগীত, পশু শিকার, পাশা খেলা, রথ চালনা, মাছ ধরা, ষাঁড়ের লড়াই ইত্যাদি। 


বাণিজ্যের মাধ্যম:

মুদ্রার প্রচলন না হওয়ায় পণ্যদ্রব্য বিনিময়ের মাধ্যমে কেনাবেচা চলত। 


মৃতদেহ সৎকার পদ্ধতি:

হরপ্পা সভ্যতার অধিবাসীরা মৃতদেহকে সমাধিস্থ করত। কখনো কখনো মৃত দেহকে দাহ করে মৃতের দেহাস্থি মাটির পাত্র করে পুতে রাখা হত। সমাধিক্ষেত্রে মৃতব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিসপত্র ও অলংকার রাখা হত। এগুলি থেকে তাদের পারোলৌকিক বিশ্বাসের আভাস মেলে। 


এই সভ্যতার অবলুপ্তির কারণ সমূহ:

এ সম্পর্কে নানান মতামত প্রচলিত আছে। জলবায়ুর পরিবর্তন, আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক অবক্ষয়, বর্বর আর্যদের আক্রমণ, ভূমিকম্প, অগ্নিকাণ্ড, বন্যা, ব্যাপক বৃক্ষচ্ছেদন প্রভৃতি। তবে এই সভ্যতার ধ্বংসের কারণ নিয়ে আজও গবেষণা অব্যাহত, ভবিষ্যতে আমরা আরো অনেক নতুন তথ্য এ সম্বন্ধে জানতে পারবো।



সম্পর্কিত তথ্য সমূহ:


❒ হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো শহর দুটির মধ্যে দূরত্ব - প্রায় ৬৪০ কিলোমিটার। (মতান্তরে প্রায় ৪৮৩ কিমি)। 


❒ মহেঞ্জোদাড়োতে প্রাপ্ত স্নানাগারটির আয়তন বাইরের দিকের মাপ ছিল ১৮০ ফিট × ১০৮ ফিট। স্নান করার জলাধারটির মাপ ছিল ৩৯ ফিট × ২৩ ফিট এবং গভীরতা ৮ ফিট। 


❒ হরপ্পার দুর্গ সংলগ্ন স্থানে আবিষ্কৃত শস্যাগারটির আয়তন হল লম্বায় ১৬৯ ফিট × ১৩৫ ফিট। (মতান্তরে ২০০ ফিট × ১৫০ ফিট)। 


❒ হরপ্পা সভ্যতার প্রায় প্রতিটি নগরে যে উঁচু এলাকা ছিল সেটি 'সিটাডেল' নামে পরিচিত। ঢোলাভিরার দুর্গ বা সিটাডেল ছিল সবচেয়ে বিস্ময়কর 'হরপ্পীয় স্থাপত্য'। চানহুদাড়ো ছিল একমাত্র সিটাডেল বিহীন। 


❒ মহেঞ্জোদাড়ো শহরের প্রধান পথটি ছিল ১০.৪ মিটার চওড়া অর্থাৎ প্রায় ৩৪ ফিট চওড়া। 


❒ হরপ্পা সভ্যতায় বাড়িঘর গুলির নির্মাণ পদ্ধতি ছিল - গ্রিট পদ্ধতি বা জালকাকার পদ্ধতি। 


❒ এই সভ্যতায় সমাজ প্রধানত তিন শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল - ১) শাসকশ্রেণি, ২) ব্যবসায়ী ও কারিগর শ্রেণি, ৩) শ্রমিক, কৃষক ও সাধারণ মানুষ। হরপ্পার সমাজ ছিল মাতৃতান্ত্রিক। 


❒ অধুনা হরপ্পা ও মহেঞ্জোদাড়ো নগরী দুটি পাকিস্তানের অন্তর্গত। খনন কার্যের ফলে মহেঞ্জোদাড়োতে সভ্যতার নয়টি (মতান্তরে ৭টি) স্তর এবং হরপ্পায় আটটি (মতান্তরে ৬টি) স্তর আবিষ্কৃত হয়েছে। 


❒ হরপ্পা সভ্যতায় ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত বণিকগণ 'গণি' নামে পরিচিত। 


❒ সোকপিট, ম্যানহোল, ডাস্টবিন প্রভৃতি নিদর্শন এই সভ্যতার উন্নত পৌরপরিষেবা ও নাগরিক স্বাস্থ্যসচেতনতার পরিচায়ক। 


❒ হরপ্পীয় শহরগুলির স্থাপত্য সম্বন্ধে প্রত্নতত্ত্ববিদ জ্যাকম্যান মনে করেন শহরগুলির পরিকল্পনার মূল ভিত্তি মহাকাশের গ্রহ নক্ষত্রের অবস্থান থেকে সংগৃহীত। একে তিনি "Cosmological Principles" বলে আখ্যায়িত করেন। 


❒ সুতিবস্ত্র ও তুলো ছিল হরপ্পার রপ্তানি বাণিজ্যের প্রধান উপকরণ। হরপ্পায় উট, গাধা, বলদ মাল বাহক পশু ছিল। 


❒ হরপ্পা সভ্যতায় লোহা ও ঘোড়ার ব্যবহার অজ্ঞাত ছিল। এখানে 'ষাঁড়' শ্রদ্ধার আসনে অধিষ্ঠিত ছিল। হরপ্পাবাসীরা অশ্বত্থ গাছ ও পিপল বৃক্ষ (বটগাছ) কেও পূজা করত। 


❒ সিন্ধুর মানুষ সূর্য পূজার প্রতীক হিসাবে যে চিহ্ন ব্যবহার করতেন তা হল স্বস্তিক চিহ্ন। 


❒ হরপ্পা সভ্যতায় বছরে দুবার চাষ হত, একবার খারিফ শস্য ভাদ্র-আশ্বিন (শরৎকাল) মাসে আরেকবার রবিশস্য ফাল্গুন-চৈত্র (বসন্তকাল) মাসে। 


❒ কালিবঙ্গান শব্দটির অর্থ হল 'কালোবালা'। গুজরাতি ভাষায় লোথাল শব্দের অর্থ 'মৃতের স্থান'। 


❒ লোথাল ছিল হরপ্পার প্রাচীন বন্দর এবং ভানুমতী সিকোটারিমাতা ছিলেন সমুদ্রের প্রধান দেবী। যার পূজা-অর্চনা এখনও প্রচলিত রয়েছে। 


❒ হরপ্পার লিপি সাংকেতিক লিপি এতে ৩৭৫ - ৪০০ টির মতো চিহ্ন রয়েছে। 


❒ হরপ্পার স্থানীয় অধিবাসীদের প্রধান খাদ্য ছিল গম ও যব। তামার বঁড়শির নিদর্শন থেকে বোঝা যায় যে মাছ তাদের প্রিয় খাদ্য ছিল। 


❒ মোটামুটি ভাবে হরপ্পার সমাজকে তিন শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায় - উচ্চবিত্ত (ক্ষমতাসীন শাসক সম্প্রদায়), মধ্যবিত্ত (ধনী বনিক ও বুর্জোয়া), নিম্নবিত্ত (দরিদ্র শ্রমিক ও কৃষককুল)। 


❒ বাণিজ্যের সুবিধার্থে সিন্ধুর সকল শহরগুলিতে একই ধরনের ওজন ও মাপ চালু ছিল। লোথালে একটি ওজন যন্ত্র পাওয়া গেছে। 


❒ হরপ্পা সভ্যতার বাটখারা গুলি ছিল ঘনকের মত। যা সাধারণত চুনাপাথর ও স্টিটাইট পাথর দ্বারা নির্মিত ছিল। 


❒ সিন্ধু উপত্যকায় প্রাপ্ত সিলমোহর গুলি ছিল পোড়ামাটি, তামা ও ব্রোঞ্জ দ্বারা নির্মিত। 


❒ হরপ্পা সভ্যতায় প্রাপ্ত সিলমোহরের অর্ধ-নর, অর্ধ-বৃষ মূর্তিটির সঙ্গে সুমেরের গিলগামেশ নামক বীরের সাহায্যকারী অর্ধ-নর, অর্ধ-বৃষ আকৃতি বিশিষ্ট 'ইঅবনি' মূর্তির যথেষ্ট সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। 


❒ তামা ও ব্রোঞ্জ দ্বারা নির্মিত বর্ষা, গদা, কুঠার, তীর-ধনুক তারা অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করত। 


❒ সিন্ধু সভ্যতার অস্তিত্বের কথা সর্বপ্রথম সারাবিশ্বে জ্ঞাত হয় ভারতের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধিকর্তা সার্জন মার্শালের সচিত্র বিবরন ১৯২৪ সালে 'London Illustrated News' পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পর। 


❒ হরপ্পার মৃৎশিল্পীরা পলিমাটি, বালি ও চুনের গুঁড়ো মিশিয়ে কলসি, জালা, থালা, পেয়ালা, নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র ও নানা প্রকার খেলনা তৈরি করত। লাল পোড়া মাটির পাত্রের গায়ে কালো রং লাগানোর বিশেষ চল ছিল। মৃৎপাত্রের গায়ে ও পোড়ামাটির মূর্তিতে পাওয়া যায় খরগোশ, ময়ূর, পায়রা, হাস, বাঁদর ও বুনো মুরগির চিত্র। 


❒ মহেঞ্জোদাড়োতেও একটি বৃহৎ শস্যাগার মিলেছে যা হরপ্পার শস্যাগারের তুলনায় কিছুটা ছোট। সেটির দৈর্ঘ্য ৪৫.৭১ মিটার × প্রস্থ ১৫.২৩ মিটার।






More Important GK Link
Popular Names of Towns in India Click Here


Post a Comment

0 Comments

Top Post Ad

Bottom Post Ad