পদার্থের অবস্থা - State of Matter
![]() |
পদার্থের অবস্থা - State of Matter |
ভৌতবিজ্ঞান বা রসায়নের ক্ষেত্রে 'পদার্থের অবস্থা' বিষয়টির ভূমিকা অপরিসীম। বিজ্ঞানের প্রাথমিক ভিত্তি এই 'পদার্থের অবস্থা' যেকোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ক্ষেত্রে এই গুরুত্বপূর্ণ। সেই বিষয়ের ওপর প্রাথমিক কিছু ধারণা দিয়ে আজকের এই পোস্ট 'পদার্থের অবস্থা'।
পদার্থের অবস্থা - State of Matter
➢ সাধারণত পদার্থের তিনটি অবস্থা লক্ষ্য করা যায়। যথাক্রমে - কঠিন (Solid) তরল (Liquid) ও গ্যাসীয় (Gaseous)।
➢ কোনো পদার্থের অবস্থা, উষ্ণতা ও চাপের উপর নির্ভর করে।
➢ যখন বাষ্পের উষ্ণতা ক্রান্তীয় বা সংকট উষ্ণতার থেকে বেশি হয়, তখন সেটি গ্যাসীয় অবস্থা।
➢ অপেক্ষাকৃত কম তাপমাত্রায় পদার্থের অণুগুলির মধ্যে আন্তঃআণবিক ব্যবধান কম থাকায় তাদের মধ্যে অনেক বেশি আকর্ষণ বল ক্রিয়া করে। তাই কম তাপমাত্রায় পদার্থের অবস্থা কঠিন হয়।
➢ কঠিন পদার্থের তাপ প্রয়োগ করলে আণবিক বন্ধন দুর্বল হতে থাকে ও পদার্থটি গলে তরল রূপ ধারণ করে।
➢ গ্যাসীয় পদার্থের ক্ষেত্রে আন্তঃআণবিক ব্যবধান সবচেয়ে বেশি। তরল পদার্থকে উত্তপ্ত করলে তাপ শক্তি অণুগুলির আকর্ষণ বলের বিরুদ্ধে কাজ করে। একটি নির্দিষ্ট উষ্ণতায় পৌঁছালে তাপশক্তি অণুগুলির ব্যবধান অনেক বাড়িয়ে দেয় ও গ্যাসীয় সীমায় পৌঁছে দেয়, তখন তরল গ্যাসে পরিণত হয়।
➢ বর্তমানে পদার্থের আরও দুটি অবস্থার অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়েছে। সেগুলি হল - প্লাজমা অবস্থা ও তরল ক্রিস্টাল অবস্থা।
➢ প্লাজমা অবস্থায় পদার্থের অসংখ্য মুক্ত ইলেকট্রন ও ধনাত্মক আয়নগুলি প্রায় সমসংখ্যায় মিশ্রিত থাকে। নক্ষত্রের অভ্যন্তরে মূলত পদার্থের প্লাজমা দশার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এছাড়াও পৃথিবীর আয়নোস্ফিয়ার ও মেরুজ্যোতি বা অরোরাতেও পদার্থ প্লাজমা দশায় অবস্থান করে।
➢ পদার্থের তরল ক্রিস্টাল অবস্থাটি হল তরল অবস্থা ও কঠিন ক্রিস্টাল অবস্থার মধ্যবর্তী দশা।
➢ কোষপর্দা হল লিক্যুইড তরল ক্রিস্টাল অবস্থার উদাহরণ। কোলেস্টেরল লিক্যুইড ক্রিস্টাল অবস্থাতেই থাকে।
➢ কঠিন পদার্থের একটি নির্দিষ্ট আকার ও আয়তন থাকে। তরল পদার্থের নির্দিষ্ট আয়তন থাকে, কিন্তু আকার থাকে না। যখন যে পাত্রে রাখা হয় সেই পাত্রের আকার ধারণ করে। গ্যাসীয় পদার্থের নির্দিষ্ট আকার বা আয়তন কিছুই থাকে না। গ্যাসীয় পদার্থকে যখন যে পাত্রে রাখা হয়, তখন সেই পাত্রের আকার ও আয়তন ধারণ করে।
➢ দুটি ভিন্ন তরল পদার্থ কে পরস্পরের সংস্পর্শে আনলে যদি তারা মিশে যায়, তবে ওই তরলদ্বয়কে মিশ্রণীয় তরল বলা হয়। যেমন - হেক্সেন ও অক্টেন মিশ্রণীয়, জল ও ইথানল মিশ্রণীয়।
দুটি অমিশ্রণীয় তরল একে অপরের সংস্পর্শে এলেও মিশে যায় না। যেমন - জল ও তেল, জল ও হেক্সেন প্রভৃতি।
➢ কঠিন পদার্থের সাধারণত দুটি প্রকারভেদ লক্ষ্য করা যায় - নিয়তাকার ও অনিয়তাকার। নিয়তাকার কঠিনের নির্দিষ্ট জ্যামিতিক আকার থাকে ও এই একটি নির্দিষ্ট গঠন একক থাকে, যার নিয়মিত পুনরাবৃত্তির ফলেই সমগ্র কঠিনটি গঠিত হয়। যেমন বরফ, হীরক, কোয়ার্জ পাথর, সোডিয়াম ক্লোরাইড প্রভৃতি। অনিয়তাকার কঠিন গুলির নিয়মিত জ্যামিতিক আকার থাকে না যেমন কাচ, রবার, প্লাস্টিক প্রভৃতি।
➢ কাচকে অতিশীতলীকৃত তরল বা ছদ্ম কঠিন পদার্থ বলা হয়। কারণ, কাচের মধ্যে অতি ধীরগতিতে অবস্থিত হওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। বহু পুরোনো দিনের জানালা বা দরজার কাচকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে ওই কাচের ওপরের অংশ অপেক্ষা নীচের অংশ বেশি পুরু।
➢ পদার্থের তিনটি অবস্থা থাকলেও কোনো বস্তু কী অবস্থায় থাকবে তা নির্ভর করে বস্তুটির ওপর প্রযুক্ত চাপ ও তাপমাত্রার উপর।
উদাহরণ: ভারত সাধারণ উষ্ণতায় তরল। পারদের উষ্ণতা (-39°C)-এ নিয়ে গেলে পারদ কঠিন হয়ে যায়। আবার পারদের উষ্ণতা 357°C-এ আনলে ভারত বর্ষ পরিণত হয়।
(ads1)
➢ উর্ধ্বপাতন: এমন কিছু কঠিন পদার্থ আছে, যাদের উপর তাপ প্রয়োগ করলে তরল অবস্থায় না এসে সরাসরি বাষ্পীয় অবস্থায় চলে যায় ও সেই বাষ্পকে আবার ঠান্ডা করলে পদার্থ গুলি পুনরায় সরাসরি কঠিন অবস্থায় ফিরে আসে। এই ঘটনাকে ঊর্ধ্বপাতন বলে। কর্পূর, নিশাদল, আয়োডিন, ন্যাপথলিন প্রভৃতি ক্ষেত্রে উর্ধ্বপাতন লক্ষ্য করা যায়।
➢ গলনাঙ্ক: প্রমাণ চাপে, যে নির্দিষ্ট উষ্ণতায় কোনো কঠিন পদার্থ গলে তরলে পরিণত হয়, সেই নির্দিষ্ট উষ্ণতাকে ওই কঠিনের গলনাঙ্ক বলে। যেমন: পারদের গলনাঙ্ক -38.83°C, টাংস্টেনের গলনাঙ্ক 3414°C (সর্বোচ্চ গলনাঙ্ক)।
➢ স্ফুটনাঙ্ক: প্রমাণ চাপে, যে নির্দিষ্ট উষ্ণতায় কোনো বিশুদ্ধ তরলের সমস্ত অংশ থেকে তরল বাষ্পে পরিণত হতে থাকে, সেই নির্দিষ্ট উষ্ণতাকে ওই তরলের স্ফুটনাঙ্ক বলে। যেমন- আইসোবিউটনের ফুটনাঙ্ক - 11.7°C, জলের স্ফুটনাঙ্ক 100°C।
➢ হিমাঙ্ক: প্রমাণ চাপে, যে নির্দিষ্ট উষ্ণতায় কোন বিশুদ্ধ তরল পদার্থ জমে কঠিনে পরিণত হয়, সেই নির্দিষ্ট উষ্ণতাকে ওই তরলের হিমাঙ্ক বলে। যেমন: জলের হিমাঙ্ক 0°C।
➢ শক্তির নিত্যতা সূত্র: পদার্থের অবস্থার পরিবর্তনের সঙ্গে শক্তির রূপান্তরও জড়িত। সব রাসায়নিক ও ভৌত পরিবর্তনে পদার্থ ও তার পারিপার্শ্বিকের মধ্যে শক্তির আদানপ্রদান ঘটে। তবে এই শক্তির আদানপ্রদানে সর্বমোট শক্তির পরিমান সর্বদা ধ্রুবক থাকে। শক্তিকে সৃষ্টি বা ধ্বংস করা যায় না। শক্তি শুধু একরূপ থেকে অন্য রূপে রূপান্তরিত হয়। বিশ্বে সর্বমোট শক্তির পরিমাণ সর্বদা অপরিবর্তিত থাকে।
➢ পদার্থের অবস্থার পরিবর্তন দুই প্রকার - ভৌত পরিবর্তন ও রাসায়নিক পরিবর্তন।
ভৌত পরিবর্তন: যে পরিবর্তনে পদার্থের মূল গঠনের কোনো পরিবর্তন ঘটে না, অর্থাৎ পদার্থের অনুর গঠনের কোনো পরিবর্তন হয় না, শুধু ভৌত অবস্থার রূপান্তর ঘটে, সেই পরিবর্তনকে ভৌত পরিবর্তন বলে। এই পরিবর্তন অস্থায়ী।
উদাহরণ: জলের স্ফুটন, লোহার চুম্বকের পরিবৃত হওয়া, মোমের গলন, উর্ধ্বপাতন প্রভৃতি।
রাসায়নিক পরিবর্তন: যে পরিবর্তনে পদার্থের মূল গঠন পরিবর্তিত হয়ে পদার্থটি এক বা একাধিক নতুন ধর্মবিশিষ্ট অন্য পদার্থে পরিণত হয়, সেই পরিবর্তনকে রাসায়নিক পরিবর্তন বলা হয়। এই পরিবর্তন স্থায়ী।
উদাহরণ: মোমবাতির দহন, কয়লার দহন, তড়িৎ-বিশ্লেষণ, লোহার মরিচা প্রভৃতি।
➢ অনুঘটক বা ক্যাটালিস্ট: যে পদার্থ কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়ায় উপস্থিত থেকে, বিক্রিয়াটির বেগ বাড়ায় বা কমায়, অথচ বিক্রিয়া শেষে যার নিজের কোনো রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে না, তাকে অনুঘটক বা, ক্যাটালিস্ট বলে।
পজিটিভ ক্যাটালিস্ট: যে অনুঘটক বা ক্যাটালিস্ট বিক্রিয়ায় উপস্থিত থেকে বিক্রিয়াটির বেগ বাড়ায় তাকে পজিটিভ ক্যাটালিস্ট বলে।
যেমন: KCIO₃ কে 630°C উষ্ণতায় উত্তপ্ত করলে অক্সিজেন পাওয়া যায়। কিন্তু, এক্ষেত্রে KCIO₂-এর বিয়োজন বিক্রিয়াটি খুব ধীরগতিতে সম্পন্ন হয়। KCIO₂-এর সঙ্গে সামান্য MnO₂ মিশিয়ে উত্তপ্ত করলে অনেক কম উষ্ণতায় (250°C) KCIO₃ দ্রুত গতিতে বিশ্লিষ্ট হয়ে O₃ মুক্ত করে। এক্ষেত্রে MnO₂ ধনাত্মক অনুঘটক হিসাবে কাজ করে।
নেগেটিভ ক্যাটালিস্ট: যে অনুঘটক বা ক্যাটালিস্ট বিক্রিয়ায় উপস্থিত থেকে বিক্রিয়াটির বেগ কমিয়ে দেয়, তাকে নেগেটিভ ক্যাটালিস্ট বলা হয়।
যেমন: H₂O₂-এর মধ্যে সামান্য পরিমাণ H₂SO₄ বা H₂PO₄ যোগ করলে হাইড্রোজেন পারক্সাইড (H₂O₃)-এর প্রিয়জন বিক্রিয়ার বেগ মন্থর হয়ে যায়। এক্ষেত্রে H₂SO₄ বা H₂PO₄ ঋণাত্মক অনুঘটকের ভূমিকা পালন করে।
➢ তাপমোচী পদার্থ: যেসব পদার্থ রাসায়নিক পরিবর্তনের ফলে উৎপন্ন হওয়ার সময় তাপ উৎপন্ন করে সৃষ্টি হয়, সেইসব পদার্থকে তাপ উৎপাদক বা তাপমোচী পদার্থ বলা হয়। উদাহরণ: CO₂, H₂O, NH₃, Ca(OH)₂, HCl প্রভৃতি।
➢ তাপশোষী পদার্থ: যেসব পদার্থ রাসায়নিক পরিবর্তনের ফলে উৎপন্ন হওয়ার সময় তাপ শোষণ করে সৃষ্টি হয়, সেইসব পদার্থকে তাপগ্রাহক বা তাপশোষী পদার্থ বলে। উদাহরণ: CS₂, NO₂, HI, CO প্রভৃতি।
Read More...
◾ ভারতের রাষ্ট্রনীতি - গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর
◾ ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম - গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর
Please do not enter any spam link in the comment box.