Ads Area

সংসদ এবং রাজ্য বিধানসভার বিল পাশের বিভিন্ন পদ্ধতি

সংসদ এবং রাজ্য বিধানসভার বিল পাশের বিভিন্ন পদ্ধতি

সংসদ এবং রাজ্য বিধানসভার বিল পাশের বিভিন্ন পদ্ধতি
সংসদ এবং রাজ্য বিধানসভার বিল পাশের বিভিন্ন পদ্ধতি

সংসদের বিল পাশের পদ্ধতি:-


সংসদের উভয় কক্ষের আইনি প্রক্রিয়া একই প্রকৃতির হয়। প্রতিটি বিল সংসদের উভয় কক্ষে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অগ্রসর হওয়ার পর তা পাশ হয়। সংসদে প্রধানত দুই ধরনের বিল উত্থাপন করা যায়। এক হল পাবলিক বিল এবং অপরটি হল ব্যক্তিগত বিল। দুই বিল একই সাধারণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অগ্রসর হয় বিভিন্ন পর্যায়ের মধ্যে দিয়ে।


পাবলিক বিল ও ব্যক্তিগত বিলের পার্থক্য


পাবলিক বিল ব্যক্তিগত বিল
উত্থাপন সাধারণত সংসদে কোন মন্ত্রী এই ধরনের বিল উত্থাপন করে থাকেন। এই ধরনের বিল সাধারণত মন্ত্রী ছাড়া সংসদে যে কোনো সদস্য উত্থাপন করে থাকেন।
পলিসি এই বিলের মধ্যে দিয়ে সরকার বা শাসক দলের পলিসি বা নীতি প্রকাশ পায়। এই বিলের মধ্যে দিয়ে বিরোধী দলের পলিসি বা নীতি প্রকাশ পায়।
পাশের সম্ভাবনা যেহেতু এই বিল সরকারের তরফ থেকে নিয়ে আসা হয়, তাই সংসদে এই বিল সহজেই পাশ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যেহেতু এই বিল মূলত বিরোধী দল বা মন্ত্রী নয় এমন সংসদের কোন সদস্য উত্থাপন করে থাকে, তাই এই বিল পাশের সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।
বিল পাশ না হওয়ার প্রভাব যেহেতু এই বিল সরকারের তরফ থেকে পেশ করা হয়, তাই এই বিল পাশ না হলে সংসদে সরকারের আস্থা হারানোর সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়। এই বিল সংসদে পাশ না হলে আস্থা হারাবার মতো কোনো সম্ভাবনা সৃষ্টি হয় না।
বিজ্ঞপ্তির সময়কাল এই বিল সংসদে পাশ করবার আগে সংশ্লিষ্ট কক্ষকে সাতদিন আগে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানাতে হয়। এই বিল সংসদে পেশ করবার আগে সংশ্লিষ্ট কক্ষকে একমাস আগে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানাতে হয়।
খসড়া তৈরি এই বিলের খসড়া তৈরি করে থাকে সংশ্লিষ্ট দপ্তর, যার জন্য তারা আইন দপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করে থাকে। এই বিলের খসড়ার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্যের।


বিলের ধরনের ওপর ভিত্তি করে সংসদে উত্থাপিত বিলকে চারভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে, যথা- সাধারণ বিল, অর্থ বিল, অর্থনৈতিক বিল এবং সংবিধান সংশোধনী বিল।


সাধারণ বিল:

প্রতিটি সাধারণ বিল সংসদে পাঁচটি পর্যায়ের মধ্যে দিয়ে পাশ হতে হয় এবং তারপর সেটি আইন লিপিবদ্ধকরণ বইয়ে জায়গা পায়।


১। প্রথম পাঠ:

সাধারণ বিল সংসদের যেকোনো কক্ষে উত্থাপিত করা যায়। এই ধরনের বিল মন্ত্রী বা যেকোনো ব্যক্তিগত সদস্য উত্থাপন করতে পারেন। যে সদস্য বিলটি উত্থাপন করতে চান তাকে কক্ষের কাছে ছুটির আবেদন জানাতে হবে। সংশ্লিষ্ট কক্ষ এই আবেদন মঞ্জুর করলে, বিলের উত্থাপক বিলের শিরোনাম ও উদ্দেশ্যগুলি কক্ষে উত্থাপন করেন। এই পর্যায়ে কোন আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় না। পরবর্তীকালে বিলটি গেজেট অফ ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত হয়। যদি কোন বিল সংসদের কোন কক্ষে উত্থাপনের পূর্বে গেজেট অফ ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত হয়, তাহলে বিলটি উত্থাপনের জন্য ছুটির আবেদনের প্রয়োজন হয় না। উত্থাপন এবং গেজেট প্রকাশ বিলটির প্রথম পাঠ হিসাবে বিবেচিত হয়।


২। দ্বিতীয় পাঠ:

এই পর্যায়ে বিলটি শুধুমাত্র গ্রহণ করা হয় না, পাশাপাশি পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে অন্তিম আকৃতি প্রদান করা হয়। সুতরাং এটি বিল প্রণয়নের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়। এই পর্যায়ের আরো তিনটি উপপর্যায় রয়েছে, যথা- সাধারণ আলোচনার পর্যায়, কমিটি পর্যায় এবং বিবেচনা পর্যায়।


(a) সাধারণ আলোচনা পর্যায়: এই পর্যায়ে বিলটির মুদ্রিত কপি কক্ষের সমস্ত সদস্যকে বিতরণ করা হয়। বিলটির নীতি ও ধারাগুলি এই পর্যায়ে সাধারণভাবে আলোচিত হয়, কিন্তু বিলটির বিশদে আলোচনা হয় না। এই পর্যায়ে কক্ষ নিম্নলিখিত চারটি বিকল্পের মধ্যে যেকোনো একটি গ্রহণ করে থাকে, যথা- 

(i) কক্ষ বিলটিকে তৎক্ষণাৎ অথবা নির্দিষ্ট দিনে বিবেচনার জন্য গ্রহণ করতে পারে।

(ii) কক্ষের যেকোনো নির্বাচিত কমিটির কাছে বিলটি প্রেরণ করতে পারে।

(iii) উভয় কক্ষের যৌথ কমিটির কাছে বিলটি প্রেরণ করতে পারে।

(iv) জনমতের উদ্দেশ্যে বিলটির প্রচার করতে পারে।


(b) কমিটি পর্যায়: এই পর্যায়ে বিলটিকে কক্ষের একটি নির্বাচিত কমিটিতে প্রেরণ করা হয়। সেই কমিটি বিলটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অধ্যায়ন করে। কমিটি বিলটির অন্তর্নিহিত নীতিগুলি অপরিবর্তিত রেখে বিধানগুলি সংশোধন করতে পারে। বিল সংক্রান্ত আলোচনা ও যাচাই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হলে কমিটি বিলটিকে কক্ষে ফেরত পাঠায়।


(c) বিবেচনা পর্যায়: নির্বাচিত কমিটির কাছ থেকে বিলটি গ্রহণ করার পর কক্ষে বিলটির ধারাগুলি নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা হয় এবং আলাদা আলাদাভাবে ভোট দান করা হয়। কক্ষের যেকোনো সদস্য যদি বিলে কোন সংশোধন করতে চায় এবং তা যদি গৃহীত হয়, তবে তিনিও বিলটির অংশ হিসেবে বিবেচিত হন।


৩। তৃতীয় পাঠ:

এই পর্যায়ে বিলটি গ্রহণ বা পরিত্যাগের বিষয়ে আলোচনা করা হয়। এই পর্যায়ে কোন সংশোধনী গ্রাহ্য হয় না। এই পর্যায়ে কক্ষে উপস্থিত সংখ্যাধিক্য সদস্য পক্ষে ভোট দিলে বিলটি পাশ হয় বা বিপক্ষে ভোট দিলে বিলটি খারিজ হয়। যদি বিলটি পাশ হয় তাহলে কক্ষের প্রিসাইডিং অফিসার (লোকসভার অধ্যক্ষ বা তার অনুপস্থিতিতে উপ-অধ্যক্ষ বা রাজ্যসভার চেয়ারম্যান) বা তার অনুপস্থিতিতে ডেপুটি চেয়ারম্যান স্বাক্ষর করে তা সংসদের অপরপক্ষে প্রেরণ করেন।


৪। দ্বিতীয় কক্ষে বিল পাশের প্রক্রিয়া:

প্রথম কক্ষের ন্যায় দ্বিতীয় কক্ষেও বিলটি তিনটি পর্যায়ের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়। এই কক্ষে নিম্নলিখিত চারটি বিকল্প লক্ষ্য করা যায়-

(i) প্রথম কক্ষ যে অবস্থায় বিলটি প্রেরণ করেছে, সেই অবস্থায় বিলটি পাশ করা।

(ii) বিলে কিছু সংশোধনী যুক্ত করে বিলটি পাশ করা এবং সংশোধনী-সহ বিলটি পুনর্বিবেচনার জন্য প্রথম কক্ষে প্রেরণ করা।

(iii) এই কক্ষ বিলটি সর্বসম্মতভাবে বাতিল করতে পারে।

(iv) কক্ষ বিল সংক্রান্ত কোনো প্রক্রিয়া শুরু না করে বিলটি ফেলে রাখতে পারে।


যদি, দ্বিতীয় কক্ষ বিলটি প্রথম কক্ষ যে অবস্থায় প্রেরণ করেছে সেই অবস্থায় পাশ করে বা দ্বিতীয় কক্ষের মাধ্যমে যুক্ত করা সংশোধনীগুলি প্রথম কক্ষ মেনে নিয়ে বিলটি পাশ করে, তাহলে বিলটি সংসদের উভয় কক্ষ দ্বারা পাশ করা হয়েছে বলে বিবেচিত হবে এবং স্বাক্ষরের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে প্রেরণ করা হবে।


অন্যদিকে, দ্বিতীয় কক্ষের সংশোধনীগুলি যদি প্রথম কক্ষ গ্রহণ না করে বা দ্বিতীয় কক্ষ সর্বসম্মত ভাবে বিলটি বাতিল করে বা দ্বিতীয় কক্ষ ৬ মাস পর্যন্ত কোন প্রক্রিয়া শুরু না করে বিলটি ফেলে রাখে তাহলে একটি অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। এই অচলাবস্থা দূরীকরণের জন্য রাষ্ট্রপতি সংসদের উভয় কক্ষের যৌথ অধিবেশন আহ্বান করেন এবং এই অধিবেশনে সভাপতি দায়িত্ব পালন করে থাকেন লোকসভার অধ্যক্ষ। এই অধিবেশনে উপস্থিত সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য বিলটির পক্ষে ভোট দিলে বিলটি সংসদের উভয় কক্ষ দ্বারা পাশ হিসাবে বিবেচিত হবে।


৫। রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর:

সংসদের উভয় কক্ষ দ্বারা বিল পাশ হবার পর বিলটি স্বাক্ষরের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে প্রেরণ করা হয়। এই ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির কাছে নিম্নলিখিত তিনটি বিকল্প থাকে, যথা-

(i) তিনি বিলে স্বাক্ষর করবেন।

(ii) তিনি বিলে স্বাক্ষর করবেন না।

(iii) তিনি বিলটি পুনর্বিবেচনার জন্য সংসদের উভয় কক্ষে ফেরত পাঠাবেন।

যদি, রাষ্ট্রপতি বিলে স্বাক্ষর করেন তাহলে বিলটি আইনে পরিণত হবে ও আইন লিপিবদ্ধকরণ বইয়ে স্থান পাবে। কিন্তু যদি রাষ্ট্রপতি বিলে স্বাক্ষর না করেন তাহলে বিলটি বাতিল হবে এবং তা কখনোই আইনে পরিণত হবে না।

অন্যদিকে, রাষ্ট্রপতি যদি বিলটি পুনর্বিবেচনার জন্য সংসদের উভয় কক্ষে প্রেরণ করে থাকেন এবং উভয় কক্ষ যদি সংশোধনী সহ বা সংশোধনী ছাড়া বিলটি পাশ করে পুনরায় রাষ্ট্রপতির কাছে প্রেরণ করে, তাহলে রাষ্ট্রপতি বিলটি স্বাক্ষর করতে বাধ্য থাকবেন।



অর্থ বিল:

সংবিধানের ১১০ নং ধারায় অর্থ বিল সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। এই ধারায় উল্লেখিত রয়েছে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি অর্থ বিলের মধ্যে পড়বে, সেগুলি হল:

১। কোনো করের আরোপ, বিলোপ, মুকুব, পরিবর্তন বা নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বিল।

২। কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা অর্থ ধারের নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বিল।

৩। কেন্দ্রীয় সরকারের হেফাজতে থাকা কনসলিডেটেড ফান্ড অফ ইন্ডিয়া বা কন্টিনজেন্সি ফান্ড অফ ইন্ডিয়া থেকে অর্থ জমা বা তোলা সংক্রান্ত বিল।

৪। কনসলিডেটেড ফান্ড অফ ইন্ডিয়া থেকে বরাদ্দ অর্থ সংক্রান্ত বিল।

৫। কনসলিডেটেড ফান্ড অফ ইন্ডিয়া থেকে ধার্য করা কোনো ব্যয় বা এই জাতীয় কোনো ব্যয়ের পরিমাণ বৃদ্ধির ঘোষণা সংক্রান্ত বিল।

৬। কনসলিডেটেড ফান্ড অফ ইন্ডিয়া, পাবলিক অ্যাকাউন্ট অফ ইন্ডিয়া বা কেন্দ্রীয় সরকারের হেফাজতে থাকা আমানতের নিরীক্ষা এবং অন্যান্য রাজ্যের ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের আমানতের নিরীক্ষা সংক্রান্ত বিল।


যে সকল বিলকে অর্থ বিল হিসাবে গণ্য করা যাবে না-

(i) যেকোনো ধরনের আর্থিক জরিমানা সংক্রান্ত বিল।

(ii) লাইসেন্সের জন্য বা প্রদত্ত পরিষেবার জন্য ধার্য অর্থ সংক্রান্ত বিল।

(iii) স্থানীয় উদ্দেশ্যে কোন কর আরোপ, বিলোপ, মুকুব, পরিবর্তন বা নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বিল।

এক্ষেত্রে বলে রাখা দরকার কোন বিল অর্থ বিল কিনা, তা সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে কেবলমাত্র লোকসভার অধ্যক্ষের। তার এই সিদ্ধান্ত নিয়ে কোন আদালত, সংসদের কোন কক্ষ বা রাষ্ট্রপতি আলোচনা করতে পারবেন না।


অর্থ বিল পাশের পদ্ধতি:

যে কোনো অর্থ বিল কেবলমাত্র লোকসভায় উত্থাপন করা যাবে, তবে এর জন্য পূর্বে রাষ্ট্রপতির অনুমতি গ্রহণ করতে হবে। রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দিলে তা লোকসভায় পেশ করা যাবে। এরপর এই বিলটি সাধারণ বিলের ন্যায় লোকসভায় পাশ হলে লোকসভার অধ্যক্ষ এটিকে অর্থ বিল হিসাবে অনুমোদন করে রাজ্যসভায় প্রেরণ করবে।

◾ অর্থ বিলের ক্ষেত্রে রাজ্যসভার ওপর কিছু বিধি-নিষেধ আরোপিত রয়েছে সংবিধানে। রাজ্যসভা এই বিল কখনোই বাতিল বা সংশোধন করতে পারবে না। রাজ্যসভা কেবলমাত্র সুপারিশ প্রদান করতে পারে যা লোকসভা মানতে পারে বা খারিজ করতে পারে। রাজ্যসভা সর্বোচ্চ ১৪ এই বিল নিজের কাছে রাখতে পারে তারপর তারা এই বিল লোকসভায় প্রেরণ করতে বাধ্য থাকবেন।

◾ যদি লোকসভা রাজ্যসভার সুপারিশ মেনে বিলটি পাশ করে তাহলে সেক্ষেত্রে বিলটি সংসদের উভয় কক্ষ দ্বারা পরিবর্তিত রূপে পাশ হয়েছে বলে বিবেচিত হবে।

◾ যদি রাজ্যসভা সর্বোচ্চ ১৪ দিনের মধ্যে বিলটি লোকসভায় প্রেরণ না করে সেক্ষেত্রে বিলটি উভয় কক্ষ দ্বারা প্রাথমিক রূপে পাশ হয়েছে বলে বিবেচিত হবে। অর্থাৎ অর্থ বিলের ক্ষেত্রে লোকসভা রাজ্যসভার তুলনায় বেশি ক্ষমতা ভোগ করে থাকে।

অর্থ বিল যখন সংসদে পাশ হয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রেরণ করা হবে, তখন রাষ্ট্রপতি এই বিলে স্বাক্ষর করবেন অথবা স্বাক্ষর করবেন না, কিন্তু কখনোই বিলটি পুনর্বিবেচনার জন্য সংসদে ফেরত পাঠাতে পারবেন না, কারণ এই বিল রাষ্ট্রপতির অনুমতি নিয়েই লোকসভায় উত্থাপন করা হয়। সচরাচর রাষ্ট্রপতি এই বিলে স্বাক্ষর করেন কারণ, তাঁর অনুমতি সাপেক্ষে বিলটি লোকসভায় উত্থাপন করা হয়।


সাধারণ বিল ও অর্থনৈতিক বিলের তুলনা


সাধারণ বিল অর্থ বিল
উত্থাপন এই বিল সংসদের যেকোনো কক্ষে উত্থাপন করা যায়। এই বিল কেবলমাত্র লোকসভায় উত্থাপন করা যায়।
উত্থাপক এই বিল কোন মন্ত্রী বা সংসদের যে কোনো সদস্য উত্থাপন করতে পারে। এই বিল কেবলমাত্র কোনো মন্ত্রী লোকসভায় উত্থাপন করতে পারেন।
রাষ্ট্রপতির অনুমোদন এই বিল সংসদে উত্থাপনের জন্য রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের প্রয়োজন নেই। এই বিল রাষ্ট্রপতির অনুমোদন সাপেক্ষে লোকসভায় উত্থাপন করা যাবে।
রাজ্যসভার ক্ষমতা এই বিল সংশোধন বা বাতিলের অধিকার রয়েছে রাজ্যসভার। রাজ্যসভা সর্বোচ্চ ছয়মাস এই বিল নিজেদের কাছে রাখতে পারে। এই বিল সংশোধন বা বাতিলের অধিকার নেই রাজ্যসভার। রাজ্যসভা কেবলমাত্র সুপারিশ প্রদান করতে পারে যা লোকসভা মানতে পারে বা খারিজ করতে পারে এবং রাজ্যসভা সর্বোচ্চ ১৪ দিন এই বিল নিজেদের কাছে রাখতে পারে।
লোকসভার অধ্যক্ষের শংসাপত্র এই বিল যখন লোকসভা থেকে রাজ্যসভায় প্রেরণ করা হয়, তখন লোকসভার অধ্যক্ষের শংসাপত্র প্রয়োজন হয় না। এই বিল রাজ্যসভায় প্রেরণ করা হলে লোকসভার অধ্যক্ষের শংসাপত্র প্রয়োজন হয়।
রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা এই বিল রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর করতে পারেন বা বাতিল করতে পারেন বা পুনর্বিবেচনার জন্য সংসদে ফেরত পাঠাতে পারেন। এই বিল রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর করতে পারেন বা বাতিল করতে পারেন কিন্তু কখনোই পুনর্বিবেচনার জন্য সংসদে ফেরত পাঠাতে পারেন না।
যৌথ অধিবেশন এই বিলের ক্ষেত্রে অচলাবস্থার সৃষ্টি হলে রাষ্ট্রপতি যৌথ অধিবেশন আহ্বান করতে পারেন। এই বিলের ক্ষেত্রে লোকসভার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত, তাই যৌথ অধিবেশনের কোন বিষয় নেই।
সরকারের পদত্যাগ যদি বিলটি কোন মন্ত্রী উত্থাপন করে থাকেন এবং এই বিল লোকসভায় পাশ না হলে সরকারের আস্থা হারানোর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, ফলে সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। এই বিল লোকসভায় পাস না হলে সরকারের আস্থা হারানোর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় এবং সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য থাকেন।



অর্থনৈতিক বিল:

অর্থনৈতিক বিল হল সেই সমস্ত বিল যেগুলি রাজস্ব সংক্রান্ত আয় বা ব্যয় বিল হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এটি প্রধানত তিন ধরনের। এক, অর্থ বিল যার উল্লেখ ১১০ নং ধারায় রয়েছে। বাকি দুটি হলো অর্থনৈতিক বিল (i) এবং অর্থনৈতিক বিল (ii) যেগুলির উল্লেখ ১১৭(১) এবং ১১৭(৩) নং ধারায় রয়েছে। এখানে উল্লেখ্য সকল অর্থ বিল এক ধরনের অর্থনৈতিক বিল কিন্তু সকল অর্থনৈতিক বিল কখনোই অর্থ বিল নয়।


অর্থনৈতিক বিল (i):

এটির উল্লেখ সংবিধানের ১১৭(১) ধারায় রয়েছে। এই বিলে অর্থ বিলে বর্ণিত সমস্ত বিষয়ের পাশাপাশি আরো কিছু সাধারণ বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে। অর্থ বিলের ন্যায় এই বিল রাষ্ট্রপতির অনুমতি সাপেক্ষে কেবলমাত্র লোকসভায় উত্থাপন করা যায়। এই বিল পাশ করার পদ্ধতিও অর্থ বিলের ন্যায় হয়ে থাকে এবং রাষ্ট্রপতি অর্থ বিলের ন্যায় এই বিলের স্বাক্ষর করতে পারেন বা খারিজ করতে পারেন, কিন্তু কখনোই পুনর্বিবেচনার জন্য সংসদে ফেরত পাঠাতে পারেন না।


অর্থনৈতিক বিল (ii):

এটির উল্লেখ সংবিধানের ১১৭(৩) নং ধারায় রয়েছে। এই বিল কনসলিডেটেড ফান্ড অফ ইন্ডিয়ার ব্যয় সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে গঠিত হয়, তবে অর্থ বিলে যে সমস্ত বিষয় উল্লেখিত রয়েছে সেগুলি বাদ দিয়ে বাকি বিষয়গুলি এই বিলে রয়েছে। এই বিল সাধারণ বিল হিসেবে বিবেচিত হয় এবং এই বিল পাশ পদ্ধতি ও রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের মাধ্যমে আইনে পরিণত হওয়ার পদ্ধতি সাধারণ বিলের মতো হয়ে থাকে। সাধারণ বিলের মতো এই বিল পাশে কোন অচলাবস্থা সৃষ্টি হলে রাষ্ট্রপতি যৌথ অধিবেশন আহ্বান করতে পারেন।



সংবিধান সংশোধনী বিল:

ভারতীয় সংবিধানের ২২তম পার্টের ৩৬৮ নং ধারায় সংবিধান সংশোধনী সংক্রান্ত ধারণা দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়টি দক্ষিণ আফ্রিকার সংবিধান থেকে নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে সংসদ সংবিধানে নতুন কোন ধারা যুক্ত করতে পারে বা উল্লেখিত যে কোনো ধারা বাতিল করতে পারে। যদিও ১৯৭৩ সালে সুপ্রিম কোর্ট কেশবানন্দ ভারতীয় মামলায় নির্দেশ প্রদান করেছিল সংসদ সংবিধান সংশোধন করতে পারবে কিন্তু সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর পরিবর্তন ঘটাতে পারবে না।


বিল পাশের পদ্ধতি:

এই বিল যে কোন মন্ত্রী বা সংসদের যেকোনো সদস্য সংসদের যেকোনো কক্ষে উত্থাপন করতে পারবে এবং এর জন্য রাষ্ট্রপতির পূর্ব অনুমোদনের প্রয়োজন নেই।

◾ এই বিল বিশেষ সংখ্যাগরিষ্ঠতা বা সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে সংসদের উভয় কক্ষে পাশ হতে হবে।

◾ এই বিল পাশের ক্ষেত্রে সদস্যদের দুই পক্ষের মধ্যে মতানৈক্যের সৃষ্টি হলে যৌথ অধিবেশন রাষ্ট্রপতি আহ্বান করতে পারবেন না।

◾ যদি এই বিলের বিষয় যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় প্রভাব ফেলে তাহলে সংসদের উভয়কক্ষে বিল পাশ হওয়ার পর তা রাজ্য বিধানসভা গুলিতে প্রেরণ করা হবে এবং তার মধ্যে অর্ধেকের বেশি রাজ্য বিধানসভা বিলটি পাশ করলে সেটি রাষ্ট্রপতির কাছে স্বাক্ষরের জন্য প্রেরণ করা হবে।

◾ রাষ্ট্রপতির কাছে এই বিল পৌঁছলে তিনি তাতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য থাকবেন। তিনি বিলটি খারিজ করতে পারবেন না বা পুনর্বিবেবেচনার জন্য বিলটি সংসদে প্রেরণ করতে পারবেন না। রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর করার পর এই বিল সংবিধান সংশোধনী আইন হিসেবে বিবেচিত হবে।


সংবিধান সংশোধনী বিলের প্রকারভেদ:

সংবিধানের ৩৬৮ নং ধারায় তিন ধরনের সংবিধান সংশোধনী বিলের প্রকারভেদ উল্লেখ রয়েছে। এক সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন, দুই হল বিশেষ সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন এবং অপরটি হল বিশেষ সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন ও অর্ধেকের বেশি রাজ্য বিধানসভা কর্তৃক সেই বিল পাশ।


সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে সংবিধান সংশোধনী বিষয়:

১। নতুন রাজ্যের স্বীকৃতি বা স্থাপনা।

২। নতুন রাজ্য সৃষ্টি, বিদ্যমান রাজ্যের এলাকা, সীমানা ও নাম পরিবর্তন।

৩। রাজ্যের বিধান পরিষদ সৃষ্টি বা বিলোপ।

৪। সংবিধানের দ্বিতীয় তপশিলে উল্লিখিত বিষয় যেমন রাজ্যপাল, রাষ্ট্রপতি, অধ্যক্ষ, বিচারকদের ভাতা, সুযোগ সুবিধা এবং স্বধীকার।

৫। সংসদের কোরাম।

৬। সংসদের সদস্যদের ভাতা ও সুযোগ সুবিধা।

৭। সংসদের কার্যপ্রণালী বিধি।

৮। সংসদ, তার সদস্য এবং তার কমিটির স্বাধীকার।

৯। সংসদে ইংরেজি ভাষার ব্যবহার।

১০। সুপ্রিম কোর্টে সর্বনিম্ন বিচারকের সংখ্যা।

১১। সুপ্রিম কোর্টকে আরো বেশি এক্তিয়ার প্রদান।

১২। সরকারি ভাষার ব্যবহার।

১৩। নাগরিকত্ব প্রদান বা কেড়ে নেওয়া।

১৪। সংসদ ও রাজ্য বিধানসভার নির্বাচন।

১৫। নির্বাচনী এলাকার সীমাবদ্ধতা।

১৬। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের বিভিন্ন বিষয়।

১৭। পঞ্চম তপশিলে উল্লিখিত তপশিলি জাতি ও উপজাতি অঞ্চলে প্রশাসন ব্যবস্থা।

১৮। ষষ্ঠ তপশিলে উল্লেখিত উপজাতি অঞ্চলে প্রশাসন ব্যবস্থা।


বিশেষ সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে যে সমস্ত বিষয়ে সংবিধান সংশোধন করা যাবে-

১। মৌলিক অধিকার

২। রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশমূলক নীতিসমূহ প্রভৃতি।


বিশেষ সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে ও অর্ধেক রাজ্য কর্তৃক বিল পাশের মাধ্যমে যে সমস্ত বিষয়ে সংবিধান সংশোধন করা যাবে-

১। রাষ্ট্রপতির নির্বাচন পদ্ধতি।

২। কেন্দ্র ও রাজ্যের কার্যাবলী ক্ষমতার বিস্তার ঘটানো।

৩। সুপ্রিম কোর্ট এবং হাইকোর্ট।

৪। কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির মধ্যে আইনি ক্ষমতার বন্টন।

৫। গুডস অ্যান্ড সার্ভিস ট্যাক্স কাউন্সিল।

৬। সপ্তম তপশিলে থাকা যেকোনো তালিকা।

৭। সংসদের রাজ্যসভা কক্ষ সংক্রান্ত বিষয়।

৮। সংসদের সংবিধান সংশোধন ও তার প্রক্রিয়া সংক্রান্ত ক্ষমতা।


লোকসভা ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে বিলের ভবিষ্যৎ:

১। লোকসভায় উত্থাপন হওয়া বিল বা রাজ্যসভা কর্তৃক প্রেরণ করা বিল লোকসভায় পড়ে থাকলে তা বাতিল হবে।

২। লোকসভায় কোনো বিল পাশ হয়ে গেছে কিন্তু, রাজ্যসভায় পড়ে রয়েছে, সেক্ষেত্রে সেটি বাতিল হবে।

৩। একটি বিল দুটি কক্ষের মতানৈক্যের কারণে পাশ হয়নি কিন্তু, লোকসভা ভেঙ্গে যাওয়ার পূর্বে রাষ্ট্রপতি যৌথ অধিবেশনে আহ্বান জানিয়েছেন সেই বিল বাতিল করা যাবে না।

৪। একটি বিল রাজ্যসভায় পড়ে আছে, কিন্তু লোকসভা পাশ করেনি, সেই বিল বাতিল হবে না।

৫। একটি বিল উভয় কক্ষ দ্বারা পাশ হয়েছে এবং রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের অপেক্ষায় রয়েছে সেই বিল বাতিল হবে না।

৬। একটি বিল উভয় কক্ষ দ্বারা পাশ হয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে স্বাক্ষরের জন্য পৌঁছেছে এবং সেই বিল রাষ্ট্রপতি পুনর্বিবেচনার জন্য সংসদে প্রেরণ করেছে সেই বিল কখনোই বাতিল হবে না।



রাজ্য বিধানসভায় বিল পাশ পদ্ধতি:


রাজ্য বিধানসভায় কেবল দুই ধরনের বিল উত্থাপন করা যায়, যথা- সাধারণ বিল এবং অর্থ বিল।


সাধারণ বিল:

এই বিল পাশ একক কক্ষবিশিষ্ট রাজ্য বিধানসভা ও দ্বিকক্ষবিশিষ্ট বিধানসভার ক্ষেত্রে পৃথক হয়ে থাকে।

◾ একক কক্ষবিশিষ্ট বিধানসভায় এই বিল প্রথম পাঠ, দ্বিতীয় পাঠ ও তৃতীয় পাঠের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হবার পর ভোটাভুটিতে পাশ হয়ে যাওয়ার পর সোজাসুজি রাজ্যপালের স্বাক্ষরের জন্য পৌঁছে যায়।

◾ দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট বিধানসভার ক্ষেত্রে এই বিল যেকোনো কক্ষে উত্থাপন করা যায়। প্রথম কক্ষে এই বিল প্রথম পাঠ, দ্বিতীয় পাঠ ও তৃতীয় পাঠের মধ্য দিয়ে যাওয়ার পর ভোটাভুটিতে পাশ হয়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয় কক্ষে প্রেরিত হয়।

◾ যদি বিলটি রাজ্য বিধান পরিষদে উত্থাপিত হয় তাহলে বিলটি পাশ হওয়ার পর রাজ্য বিধানসভায় পৌঁছলে বিলটি প্রথম পাঠ, দ্বিতীয় পাঠ ও তৃতীয় পাঠের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয় এবং ভোটাভুটিতে পাশ হয়ে গেলে রাজ্যপালের কাছে স্বাক্ষরের জন্য প্রেরণ করা হয়।

◾ যদি বিলটি রাজ্য বিধানসভায় পাশ হয়ে বিধান পরিষদে পৌঁছায়, তাহলে প্রথম পাঠ, দ্বিতীয় পাঠ ও তৃতীয় পাঠ সম্পূর্ণ হবার পর বিধান পরিষদের কাছে নিম্নলিখিত চারটি বিকল্প থাকে:

১। বিধান পরিষদ বিলটি বিধানসভা যে অবস্থায় পাঠিয়েছে সেই অবস্থাতেই পাশ করল।

২। বিধান পরিষদ বিলটিতে কিছু সংশোধনী যুক্ত করে পাশ করল এবং পুনরায় সেটি বিধানসভায় পাঠানো।

৩। বিধান পরিষদ বিলটি খারিজ করতে পারে।

৪। বিধান পরিষদ বিলের ওপর তিন মাস কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে শুধু ফেলে রাখতে পারে।

◾ যদি বিধান পরিষদ বিধানসভার প্রাথমিক রূপে বিলটি পাশ করে বা বিধান পরিষদের সংশোধনী মেনে বিধানসভা বিলটি পাশ করে, তাহলে বিলটি উভয় কক্ষ দ্বারা পাশ হয়েছে বলে বিবেচিত হবে এবং রাজ্যপালের কাছে স্বাক্ষরের জন্য প্রেরণ করা হবে।

◾ যদি বিধান পরিষদের সংশোধনী বিধানসভা খারিজ করে দেয় বা বিধান পরিষদ বিলটি খারিজ বা তিন মাস বিলের ওপর কোনো সিদ্ধান্ত না নেয়, সেক্ষেত্রে বিধান পরিষদের তুলনায় বিধানসভা বিল পাশের ক্ষেত্রে বেশি সুযোগ পেয়ে থাকে। বিধানসভা বিধান পরিষদের কাছে পুনরায় বিল পাঠালো এবং বিধান পরিষদ পুনরায় সংশোধনী যুক্ত করে বিধানসভায় বিল পাঠালো যা বিধানসভা মেনে নিল তাহলে বিলটি দ্বিতীয়বার বিধানসভা কর্তৃক পাশ হয়েছে বলে বিবেচিত হবে এবং রাজ্যপালের স্বাক্ষরের জন্য প্রেরণ করা হবে।

◾ বিধানসভা পুনরায় বিধান পরিষদের কাছে বিল পাঠালো। বিধান পরিষদ যদি বিলটি খারিজ করে দেয় তাহলে সে ক্ষেত্রেও বিলটি দ্বিতীয়বার বিধানসভা কর্তৃক পাশ হয়েছে বলে বিবেচিত হবে এবং রাজ্যপালের স্বাক্ষরের জন্য প্রেরণ করা হবে।

◾ সর্বোচ্চ তিন মাস পর্যন্ত কোন বিল বিধান পরিষদ সিদ্ধান্ত না নিয়ে ফেলে রাখতে পারে, এখন তিন মাস সময় অতিক্রমের পর বিধানসভা পুনরায় বিলটি বিধান পরিষদে পাঠালে তারা সর্বোচ্চ একমাস বিলটির ওপর সিদ্ধান্ত না নিয়ে ফেলে রাখতে পারে। কিন্তু একমাস সময় অতিক্রম করার পর বিলটি দ্বিতীয়বার বিধানসভা কর্তৃক পাস হয়েছে বলে বিবেচিত হবে এবং রাজ্যপালের স্বাক্ষরের জন্য প্রেরণ করা হবে।

◾ রাজ্যপালের কাছে বিল স্বাক্ষরের জন্য পৌঁছলে তিনি নিম্নলিখিত চারটি বিকল্প ব্যবহার করতে পারেন:-

১। তিনি বিলে স্বাক্ষর করবেন।

২। তিনি বিলে স্বাক্ষর করবেন না।

৩। তিনি বিলটি পুনর্বিবেচনার জন্য বিধানসভায় বা বিধান পরিষদে ফেরত পাঠাবেন।

৪। তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে বিলটি আলোচনার জন্য প্রেরণ করবেন।

◾ যদি দিলে রাজ্যপাল স্বাক্ষর করেন তাহলে বিলটি আইনে পরিণত হয় এবং আইন বইতে স্থান পাবে। যদি বিলে রাজ্যপাল স্বাক্ষর না করেন তাহলে বিলটি আইনে পরিণত হবে না এবং বিলটি খারিজ হয়ে যাবে। পুনর্বিবেচনার জন্য পাঠানো বিলটি পুনরায় তার কাছে পৌঁছলে তিনি বিলটিতে স্বাক্ষর দিতে বাধ্য থাকবেন।

◾ যদি রাজ্যপাল রাষ্ট্রপতির বিবেচনার জন্য বিলটি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রেরণ করে তাহলে রাষ্ট্রপতি নিম্নলিখিত তিনটি বিকল্প ব্যবহার করতে পারেন:-

১। তিনি বিলে স্বাক্ষর করবেন।

২। তিনি বিলে স্বাক্ষর করবেন না।

৩। তিনি বিলটি পুনর্বিবেচনার জন্য বিধানসভা বা বিধান পরিষদে ফেরত পাঠাবেন।

◾ রাষ্ট্রপতি বিলে স্বাক্ষর করলে বিলটি আইনে পরিণত হবে। রাষ্ট্রপতি বিলে স্বাক্ষর না করলে বিলটি খারিজ হয়ে যাবে এবং আইনে পরিণত হবে না। যদি রাষ্ট্রপতি পুনর্বিবেচনার জন্য বিলটি ফেরত পাঠিয়ে থাকে তাহলে একক কক্ষবিশিষ্ট বিধানসভা বা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট বিধানসভা ছয় মাসের মধ্যে বিলটি পাশ করে পুনরায় পাঠালে রাষ্ট্রপতি বিলে স্বাক্ষর করতে পারেন বা স্বাক্ষর না করতে পারেন।

◾ এক্ষেত্রে বলে রাখা দরকার সংসদের মতো এই বিল পাশের ক্ষেত্রে যৌথ অধিবেশন আহ্বান করা যায় না।



অর্থ বিল:

◾ সংসদের লোকসভার মতো অর্থবিল কেবলমাত্র রাজ্য বিধানসভায় উত্থাপন করা যাবে এবং তার জন্য পূর্বে রাজ্যপালের অনুমতি গ্রহণ করতে হবে।

◾ একক কক্ষবিশিষ্ট রাজ্য বিধানসভায় বিল পাশ হবার পর তা রাজ্যপালের কাছে সরাসরি স্বাক্ষরের জন্য প্রেরণ করা হয়।

◾ দ্বিকক্ষবিশিষ্ট রাজ্য বিধানসভার ক্ষেত্রে বিধানসভায় বিল পাশের পর তা বিধান পরিষদে প্রেরণ করা হলে বিধান পরিষদ বিলটি খারিজ বা সংশোধন করতে পারবে না। কেবলমাত্র সুপারিশ প্রদান করে সর্বোচ্চ ১৪ দিনের মধ্যে তা বিধানসভায় ফেরত পাঠাতে বাধ্য থাকবে। এই সুপারিশ বিধানসভা মানতে পারে বা পরিত্যাগ করতে পারে।

◾ যদি বিধানসভা বিধান পরিষদের সুপারিশ মেনে বিলটি পাশ করে তাহলে বিলটি উভয়কক্ষ দ্বারা পাশ হয়েছে বলে বিবেচিত হবে। যদি বিধানসভার বিধান পরিষদের সুপারিশ না মেনে বিলটি পাশ করে তাহলে বিলটি পরিবর্তন ছাড়া বিধানসভা কর্তৃক প্রাথমিক রূপে পাশ হয়েছে বলে বিবেচিত হবে।

◾ এই বিল রাজ্যপালের কাছে, স্বাক্ষরের জন্য পৌঁছলে রাজ্যপাল নিম্নলিখিত তিনটি বিকল্প পেয়ে থাকেন, যথা-

১। রাজ্যপাল বিল স্বাক্ষর করবেন।

২। রাজ্যপাল বিলে স্বাক্ষর করবেন না।

৩। রাজ্যপাল বিলটি রাষ্ট্রপতির কাছে পরামর্শের জন্য পাঠাবেন।

এক্ষেত্রে বলে রাখা দরকার রাজ্যপাল পুনর্বিবেচনার জন্য এই বিল বিধানসভায় ফেরত পাঠাতে পারবেন না।

◾ রাষ্ট্রপতির কাছে এই বিল পৌঁছলে তিনি বিলে স্বাক্ষর করতে পারেন বা না করতে পারেন, কিন্তু কখনোই পুনর্বিবেচনার জন্য বিধানসভায় ফেরত পাঠাতে পারবেন না।


Read More...

সংবিধান সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন

গণপরিষদ ও সংবিধান রচনার ইতিহাস

Article 12 - 35 | Fundamental Rights - মৌলিক অধিকার


Tags

Post a Comment

0 Comments

Top Post Ad

Bottom Post Ad