Ads Area

হরপ্পা সভ্যতার অবলুপ্তি বা পতনের কারণ - Causes of the decline of the Harappan Civilisation - Bangla GK Diary

হরপ্পা সভ্যতার অবলুপ্তি বা পতনের কারণ - Causes of the decline of the Harappan Civilisation - Bangla GK Diary

হরপ্পা বা সিন্ধু সভ্যতার পতনের কারণ
হরপ্পা বা সিন্ধু সভ্যতার পতনের কারণ

হরপ্পা বা সিন্ধু সভ্যতার পতনের কারণ কী? আজকের পাঠের মূল আলোচ্য বিষয়বস্তু হল সিন্ধু সভ্যতার পতনের কারণ গুলি কি ছিল। আমরা এখনও হরপ্পা সভ্যতা বা সিন্ধু সভ্যতার পতনের কারণ কী ছিল সে সম্পর্কে সঠিকভাবে অবগত নয়। গবেষণার মাধ্যমে সিন্ধু সভ্যতা কিভাবে ধ্বংস হয় সেই সম্পর্কে কিছু কারণ গবেষকরা উপস্থাপিত করেছেন। আজকের এই আলোচনায় হরপ্পা বা সিন্ধু সভ্যতার ধ্বংসের কারণ এবং সিন্ধু সভ্যতার অবদান বা হরপ্পা সংস্কৃতির প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। নিচে হরপ্পা বা সিন্ধু সভ্যতার পতনের কারণগুলি উল্লেখ করা হল-






হরপ্পা সভ্যতার পতনের কারণসমূহ


হরপ্পা সভ্যতার পতনের অনেকগুলো কারণের মধ্যে মুখ্য কারণ গুলি হল- ১) প্রাকৃতিক কারণ, ২) আর্থসামাজিক কারণ, ৩) রাজনৈতিক কারণ, ৪) বৈদেশিক আক্রমণ



হরপ্পা সভ্যতার পতনের প্রাকৃতিক কারণ


(i) ভূপ্রকৃতি ও জলবায়ু পরিবর্তন

(ii) সিন্ধু নদের গতিপথ পরিবর্তন

(iii) ভূমিকম্প

(iv) বন্যা

(v) বনাঞ্চল ধ্বংস



হরপ্পা সভ্যতার পতনের আর্থসামাজিক কারণ


(i) ভঙ্গুর কৃষিব্যবস্থা ও বাণিজ্য

(ii) রক্ষণশীল মানসিকতা

(iii) গৃহযুদ্ধ বা অন্তঃবিপ্লব

(iv) ক্রমিক অবক্ষয়

(v) অভিনিষ্ক্রমণ



হরপ্পা সভ্যতার পতনের রাজনৈতিক কারণ


(i) উপরের স্তরগুলিতে পৌর শাসনের অপদার্থতার ছাপ পরিস্ফুট হয়



হরপ্পা সভ্যতায় বৈদেশিক আক্রমণ


(i) আর্য আক্রমণ




❑ দীর্ঘদিনের উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত অস্তিত্বের পর ১৭৫০ খ্রিঃ পূর্বাব্দ নাগাদ হরপ্পা সভ্যতার দুটি প্রধান কেন্দ্র হরপ্পা ও মহেঞ্জোদাড়োর বিলুপ্তি ঘটে এবং পরবর্তী একশো বা দেড়শো বছরের মধ্যে সমগ্র হরপ্পা সভ্যতা বিলুপ্ত হয়। একই সঙ্গে এই বিলুপ্তি ঘটেনি। 


❑ সিন্ধুলিপি পাঠোদ্ধার না হওয়ায় সিন্ধু সভ্যতার মত সুবিশাল সভ্যতার পতনের কারণ সুনিশ্চিত ভাবে বলা অসম্ভব। তথাপি সিন্ধু সভ্যতার নিদর্শনগুলি পরীক্ষা করে পণ্ডিতেরা এই সভ্যতা ধ্বংসের কারণ অনুমান করেন। 


❑ গবেষণার মাধ্যমে জানা যায় যে, সিন্ধু উপত্যকার নিকটবর্তী অঞ্চলে ভূমিকম্পের উৎসস্থল থাকায় ভূমিকম্প এই সভ্যতার পতনের জন্য দায়ী। খননকার্যের ফলে প্রাপ্ত নরকঙ্কালগুলির গায়ে ক্ষত চিহ্ন এবং সৎকারের নমুনা না থাকায় হরপ্পা সভ্যতার পতনে ভূমিকম্পের ধারণা স্পষ্ট হয়। 


❑ দীর্ঘদিন অনাবৃষ্টির কারণে একসময় মাটি লবণাক্ত ও ঊষর হয়ে পড়ে। ফলে সিন্ধু অঞ্চলের মরুভূমির সূচনা ঘটে। যা পতনকে ত্বরান্বিত করে। 


❑ অনেকে মনে করেন যে পোড়া ইটের অতিমাত্রায় ব্যবহার ও অন্যান্য কারণে এখানে ব্যাপকভাবে বৃক্ষছেদন শুরু হয় এবং অঞ্চলটি ক্রমশ বনশূন্য হয়ে পড়ে ফলে বৃষ্টিপাতের অভাব দরুন কৃষি উৎপাদন কমে এলে খাদ্যাভাব তীব্রতর হয় এবং জনসাধারণ স্থান ত্যাগে বাধ্য হয়। 


❑ অনেকের মতে সিন্ধু ও তার শাখানদী এবং অন্যান্য নদনদীর গতিপথ ভিন্নমুখে প্রবাহিত হওয়ায় এই সভ্যতার পতন ঘটে। 


❑ মহেঞ্জোদাড়ো নগরটি তিনবার বন্যায় প্লাবিত হয়েছিল। এস. আর. রাও মনে করেন লোথাল, ঢোলাভিরা, রংপুর ও দিসালপুরেও বন্যার নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে। 


❑ হরপ্পাবাসীর রক্ষণশীল মানসিকতা এই সভ্যতার ধ্বংসের জন্য দায়ী। আবহাওয়া পরিবর্তন বা নদীর গতিপথ পরিবর্তনেও তারা সুমেরীয়দের মত খাল কেটে জলসেচ করার চেষ্টা করেনি, হরপ্পাবাসী উর্বর গাঙ্গেয় উপত্যকায় কৃষির সম্প্রসারণ, ভারী লাঙল ও লোহার যন্ত্রপাতি নির্মাণ করার কোনো প্রচেষ্টা চালায়নি, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সুদৃঢ়করণের জন্য ভারী অস্ত্র নির্মাণের কথাও তাদের চিন্তা-চেতনার বাইরে ছিল, ফলত তাদের বিনাশ ছিল অবশ্যম্ভাবী। 


❑ মহেঞ্জোদাড়োতে পরপর যে সাতটি স্তরে এই সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায় তার উপরের স্তরগুলিতে পৌর প্রশাসন এর অভাব পরিলক্ষিত হয়। হুইলার মন্তব্য করেছেন যে "পরবর্তী যুগের মহেঞ্জোদাড়ো আনুমানিক হরপ্পা পূর্ববর্তীযুগের তুলনায় দরিদ্র ও হতশ্রী।" 


❑ অনেক ঐতিহাসিকের মতে হরপ্পা সভ্যতার অবসান ঘটেছিল রক্তপাতের মাধ্যমে। কিন্তু এই রক্তপাতের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে ঐতিহাসিক এম. ট্যাডি বলেন গৃহযুদ্ধ বা গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ছিল এই হত্যাকাণ্ডের কারণ। 


❑ হুইলার, স্টুয়াট পিগট, গর্ডনচাইল্ড এবং অলচিন দম্পতি মনে করেন যে, আর্যদের আক্রমণের ফলে হরপ্পা সভ্যতা ধ্বংস হয়। এই প্রসঙ্গে নানা যুক্তি উপস্থাপিত করা হয়-

(i) সৎকার না হওয়া স্তুপিকৃত মৃতদেহ, (ii) আর্যদের আগমনকাল ও হরপ্পার ধ্বংসের কালের সাদৃশ্য, (iii) ঋগবেদে উল্লিখিত 'হরিয়ূপীয়ার যুদ্ধ'- কে অনেকে হরপ্পার যুদ্ধ বলে মনে করেন, (iv) ঋগবেদে রাজা ইন্দ্রকে 'পুরন্দর' বা নগর ধ্বংসকারী বলা হয়েছে যা একমাত্র হরপ্পা নগর সভ্যতার ধ্বংসের ইঙ্গিত বহন করে। 

❑ আর্নেস্ট ম্যাকে বলেছেন যে হরপ্পায় আক্রমণকারীরা ছিল বেলুচিস্তানে ব্রাহুই উপজাতির লোক।






হরপ্পা সভ্যতার পতনে বিভিন্ন মতাদর্শ - Decline of Harappan Civilisation : Different Views


যারা মনে করেন মতামত
মার্টিমার হুইলার, স্টুয়াট পিগট, গর্ডনচাইল্ড, রেমন্ড অলচিন ও ব্রিজেৎ অলচিন (অলচিন দম্পতি) বহিঃশত্রুর আক্রমণ (আর্যদের আক্রমণ)
রবার্ট এল রাইকস, জর্জ ডেলস, আর্নেস্ট ম্যাকে, এস. আর. রাও, মার্শাল, এম. আর. সাহানী, রফিক মুঘল বন্যা বা প্লাবন (উদা : মহেঞ্জোদাড়ো)
কে. ভি. আর কেনেডি মহামারী (মতান্তরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ)
স্যার জন মার্শাল ও রবার্ট এল রাইকস ও জর্জ ডেলস ভূমিকম্প (উদা : ঢোলাভিরা)
আরেলস্টাইন, অমলানন্দ ঘোষ জলবায়ুর পরিবর্তন (অনাবৃষ্টি)
মার্টিমার হুইলার ক্রমিক অবক্ষয় (অবনগরায়ণ)/আর্য আক্রমণ
ডব্লিউ. এ. ফেয়ার সার্ভিস বৃক্ষচ্ছেদন, সম্পদের ঘাটতি, পরিবেশগত ভারসাম্যহীনতা
প্রত্নতত্ত্ববিদ গ্রেগোরি পোজেল উদ্ভিদ ও প্রাণীকুল ধ্বংসের ফলে খাদ্য সংকট দেখা যায় এবং সভ্যতা বিলুপ্ত হয়।
এইচ. টি. ল্যাম্বরিক সিন্ধু নদীর গতিপথ পরিবর্তন।
ইরফান হাবিব রাজনৈতিক কারণ
আর্নেস্ট ম্যাকে বহিঃশত্রু আক্রমণকারীরা ছিল বেলুচিস্তানের ব্রাহুই উপজাতি।
গুরদীপ সিংহ শুষ্ক জলবায়ুর জন্য।
শিরীন রত্নাগর মেসোপটেমিয়ার সঙ্গে হরপ্পার লাপিস লাজুলি-সংক্রান্ত বাণিজ্যিক অবক্ষয়।
রবার্ট এল রেইকস সাধারণ বন্যা নয়, ভূপৃষ্ঠের পরিবর্তনজনিত প্রলয়ঙ্কর বন্যা এই সভ্যতাকে ধ্বংস করে।
এইচ. ডি. সাংখালিয়া কালিবঙ্গানে ঘর্ঘরা নদীর জল শুকিয়ে গেলে এই নগরটি ধ্বংস হয়।
ডি. পি. আগারয়াল এবং সুদ শুষ্কতা বৃদ্ধির কারণে নদীপথ শুকিয়ে যায় যা পতনকে ত্বরান্বিত করে। (উদা : ঘর্ঘরা, দৃষদ্বতী ও সরস্বতী)




হরপ্পা সভ্যতার ধ্বংসে সাম্প্রতিক গবেষণা - Latest Theory of Destruction of Harappan Civilisation


❑ ভারত, ইজরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকগণ ভারতের বিকানিরের কাছে পুনকরনসর নামক স্থানে প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্য চালিয়ে জানিয়েছেন যে হরপ্পা সভ্যতার প্রাকৃতিক পরিবেশ প্রথম থেকেই শুষ্ক ছিল। তাই এই সভ্যতার অবলুপ্তির জন্য জলবায়ু বা ভূ-প্রাকৃতিক পরিবর্তন দায়ী নয়। 


❑ অধুনা উপগ্রহের মাধ্যমে ভূত্বকের ছবি তুলে এই সভ্যতার বিলুপ্তির প্রকৃত কারণ সম্বন্ধে অনুসন্ধান চলছে। 


❑ ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞ বৈনই পৈসার-এর মতে, সিন্ধু উপত্যকা অঞ্চলে মহাজাগতিক বিস্ফোরণ ও ধূমকেতুর ধাক্কায় জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটেছিল। 


❑ সম্প্রতি ভূবিদ্যা বিষয়ক ফরাসি মহিলা গবেষক ডঃ ম্যারি অ্যাবাসে কোটি জানিয়েছেন- 2000 খ্রিস্টপূর্বাব্দ নাগাদ ব্রোঞ্জ যুগে পশ্চিম এশিয়া ও সিন্ধু সভ্যতার কেন্দ্রগুলিতে ব্যাপক ভৌগোলিক পরিবর্তন ঘটেছিল। 


❑ আমেরিকার বিখ্যাত 'Science' নামক পত্রিকায় সিন্ধু সভ্যতার পতন সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। 


❑ হরপ্পা সভ্যতার ধ্বংসের কারণ নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে। ভবিষ্যতে এই বিষয়ে হয়তো নতুন কোনো তথ্যের আবির্ভাব ঘটবে।






হরপ্পা সংস্কৃতির প্রভাব - The impact of the Harappan Civilisation


❑ ১৫০০ - ১৪০০ খ্রিঃ পূর্বাব্দ নাগাদ হরপ্পা সভ্যতার পতন ঘটে, কিন্তু এর পতনের সঙ্গে সঙ্গেই হরপ্পা সভ্যতার সবকিছুই শেষ হয়ে যায়নি। পরবর্তীকালে ভারতীয় সভ্যতার ওপরে এর প্রভাব ব্যাপক আকার ধারণ করে। 


❑ মেহেরগড় সভ্যতা আবিষ্কারের পূর্বে হরপ্পা সভ্যতাই হল ভারতের প্রাচীনতম সভ্যতা। এর নগর সভ্যতা, রাস্তাঘাট, পয়ঃপ্রণালী, নগর পরিকল্পনা, মৃৎশিল্প সমকালীন বিশ্বে সত্যই বিস্ময়কর ছিল। 


❑ ডঃ পুসলকার বলেন, সিন্ধু সভ্যতার পরবর্তীকালের ছাপ দেওয়া মুদ্রা সিন্ধু সভ্যতাকালের ছাপ দেওয়া সিলের অনুকরণে তৈরি হয়। 


❑ প্রাচীন ভারতীয় মুদ্রার ছাঁচ ও কাঠামোর জন্য ভারতবাসী সিন্ধু সভ্যতার কাছে ঋণী। মাপ ও ওজনের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। 


❑ মহেঞ্জোদাড়ো ও হরপ্পায় মৃৎপাত্র ও টেরাকোটার আকার, কাঠামো এবং অলংকরণ খ্রিস্ট জন্মের কয়েক শতাব্দি পূর্বে পাঞ্জাব ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে টেরাকোটা ও মৃৎপাত্রে পরিলক্ষিত হয়। 


❑ হিন্দু ধর্মে মূর্তিপূজা, প্রতীক উপাসনা, শিব ও লিঙ্গ পুজা, বলিদান প্রথা, বৃষের প্রতি ভক্তি - সবই হরপ্পা সভ্যতার অবদান। 


❑ সিন্ধু সভ্যতার বস্তুবাদী মানসিকতা ভারতীয়দের পরবর্তীযুগে প্রভাবিত করেছিল। 


❑ ডঃ সুনীতি কুমার চ্যাটার্জির মতে, "কাপড়ের বুননে যেমন লম্বা ও চওড়া দিকের সুতো থাকে, হিন্দু সভ্যতার বুননে বৈদিক ও সিন্ধু সভ্যতা সেই ভূমিকা পালন করে"।




More Important GK Link
বিভিন্ন খেলাধুলায় মাঠের নাম'এর তালিকা Click Here


Post a Comment

0 Comments

Top Post Ad

Bottom Post Ad