চিকিৎসা বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ কিছু যন্ত্রপাতির নাম ও তাদের ব্যবহার
![]() |
চিকিৎসা বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ কিছু যন্ত্রপাতির নাম |
🩺 চিকিৎসা বিজ্ঞানের যন্ত্রপাতি: নাম ও ব্যবহারে চিকিৎসাক্ষেত্রের অগ্রগতি 🧬
আধুনিক যুগে চিকিৎসা বিজ্ঞান অনেক এগিয়েছে বিভিন্ন ধরণের যন্ত্রপাতির জন্য। রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা, পর্যবেক্ষণ এবং অপারেশনে ব্যবহৃত এই যন্ত্রগুলি ডাক্তারদের কাজে অসাধারণ গতি এবং নির্ভুলতা এনেছে। থার্মোমিটার, স্টেথোস্কোপ, রক্তচাপ মনিটর থেকে শুরু করে আধুনিক ইসিজি মেশিন বা এমআরআই স্ক্যানার - প্রতিটি যন্ত্রের নিজস্ব কার্যকারিতা রয়েছে।
এই ব্লগ পোস্টে, আমরা চিকিৎসা বিজ্ঞানে ব্যবহৃত কিছু গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রের নাম, তাদের কার্যকারিতা এবং ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করব। এটি পরীক্ষার্থীদের জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি স্বাস্থ্য সচেতন সাধারণ পাঠকদের জন্যও এটি খুবই কার্যকর।
আরও পড়ুনঃ ভারতের গুরুত্বপূর্ণ নেতৃবৃন্দের সমাধিস্থল তালিকা
চিকিৎসা বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ কিছু যন্ত্রপাতি
১. আধুনিক সিস্টোস্কোপ
➢ আবিষ্কারক: ম্যাক্সিমিলান কার্ল ফ্রেডরিচ নিৎজে
➢ সময়কাল: 1887 খ্রি
➢ ব্যবহার: এই যন্ত্র যা মূত্রনালির আন্তঃ অংশ পর্যবেক্ষণ করে।
২. ক্যাট স্ক্যানার
➢ আবিষ্কারক: গডফ্রে হাউন্সফিল্ড
➢ সময়কাল: 1972 খ্রি
➢ ব্যবহার: কম্পিউটারাইজড অক্সিয়াল টোমোগ্রাফি (ক্যাট) স্ক্যিনার হল একটি যন্ত্র যা মানুষের শরীরের নির্দিষ্ট তলের চিত্র নেয়, এক্স রশ্মি ব্যবহার করে। এটি হল একটি অঙ্গুরি আকৃতি এক্স রশ্মি যন্ত্র যা বহু সংখ্যক এক্স রশ্মি দ্বারা কিছু ডিগ্রী অন্তর পরিমাপ সম্পন্ন করে। প্রাপ্ত তথ্যগুলি একটি কম্পিউটারের সাহায্যে পরিবর্তিত করে অন্তিম ছবি নেওয়া হয়।
৩. আর্টিফিশিয়াল কিডনি (কৃত্রিম বৃক্ক)
➢ আবিষ্কারক: ডঃ উইলেম কল্ফ
➢ সময়কাল: 1943 খ্রি
➢ ব্যবহার: একটি যন্ত্র যার মধ্যে বিশেষ পর্দা দ্বারা গঠিত নল থাকে এবং যা বিশ্লেষ্য দ্রবণের মধ্যে ডোবানো থাকে। এই যন্ত্রটি সেই সমস্ত রোগীদের রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশনে সাহায্য করে, যাদের বৃক্ক সঠিকভাবে কাজ করে না।
৪. ব্রঙ্কোস্কোপ
➢ আবিষ্কারক: গাস্টভ কিলিয়ান
➢ সময়কাল: 1897 খ্রি
➢ ব্যবহার: এই যন্ত্র যা আলোকিত নল দ্বারা গঠিত থাকে এবং শ্বাসনালীর মধ্যে দিয়ে প্রবেশ করানো হয় এবং ফুসফুসের ক্লোমশাখা ইত্যাদিকে পর্যবেক্ষণ করা হয়।
৫. ডিফাইব্রিলেটর
➢ আবিষ্কারক: ডঃ পল জোল
➢ সময়কাল: 1947 খ্রি
➢ ব্যবহার: একটি যন্ত্র যার সাহায্যে হৃদপিন্ডের ছন্দবদ্ধ হৃদস্পন্দন রক্ষা করা হয় তড়িৎ উত্তেজনার দ্বারা। এই যন্ত্রটি সেই সমস্ত রোগীদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় যাদের হৃদস্পন্দন দ্রুত ও অছন্দবদ্ধ এবং যেটি হল একটি ভয়ঙ্কর অবস্থা।
৬. ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাফ (ইসিজি)
➢ আবিষ্কারক: উইলেম ইনথোভেন
➢ সময়কাল: 1895 খ্রি
➢ ব্যবহার: একটি যন্ত্র যা দেহের উপর লাগানো হয় এবং লেখচিত্রের সাহায্যে হৃদপিন্ডের তড়িৎ বিভব মাপা হয় যা হৃৎপিণ্ডের ছন্দবদ্ধ সংকোচন প্রসারণের ফলে সৃষ্টি হয়। হৃদপিন্ডের অবস্থা ও প্রকোষ্ঠের কার্যপদ্ধতি নির্ণয়ের জন্য এই যন্ত্র ব্যবহৃত হয়।
৭. এন্ডোস্কোপ
➢ আবিষ্কারক: ফিলিপ বোজ্জ্বনি
➢ সময়কাল: 1806 খ্রি
➢ ব্যবহার: একটি আলোক যুক্ত নল যা অনেকগুলি লেন্সের সমন্বয় অংশের সঙ্গে যুক্ত থাকে এবং যার দ্বারা সরাসরি দেহের ভেতরকার যন্ত্রতন্ত্রের চিত্র পরিলক্ষন করা হয়।
৮. গ্যাসট্রোস্কোপ
➢ আবিষ্কারক: জোয়ান ভন মিক্যুলিকজ
➢ সময়কাল: 1881 খ্রি
➢ ব্যবহার: একটি যন্ত্র যা একটি আলোকযুক্ত নলের সঙ্গে যুক্ত থাকে। একে গলবেলের মধ্যে দিয়ে প্রবেশ করানো হয় এবং পাকস্থলীর অভ্যন্তরীণ পর্দার অবস্থা পরিলক্ষন করা হয়।
৯. হার্ট-লাং মেশিন
➢ আবিষ্কারক: ডঃ জন গিব্বন
➢ সময়কাল: 1853 খ্রি
➢ ব্যবহার: একটি মেশিন যা অনেকগুলি পাম্পের সমন্বয়ে গঠিত হয়ে হৃৎপিণ্ডের কাজ করে এবং হৃদপিন্ডের মধ্যে দিয়ে শল্য চিকিৎসার সময় ব্যবহার করা হয় তাকে বলা হয় হৃদপিণ্ড ফুসফুস যন্ত্র। এই যন্ত্র শল্য চিকিৎসার সময় সমগ্র দেহে রক্ত পাঠায়। এই যন্ত্র ফুসফুসের মত কাজ করে এবং অক্সিজেনকে রক্তের সঙ্গে মিশ্রিত করে।
১০. ল্যাপ্রোস্কোপি যন্ত্র
➢ আবিষ্কারক: জর্জ কিলিং
➢ সময়কাল: 1901 খ্রি
➢ ব্যবহার: একটি যন্ত্র যা উদর গহ্বরের মধ্যের অংশ পর্যবেক্ষণে কাজে লাগে।
১১. অলফ্যাকটোমিটার
➢ আবিষ্কারক: জোয়ার্ডেমেকার
➢ সময়কাল: 1895 খ্রি
➢ ব্যবহার: একটি যন্ত্র যা ঘ্রাণ ইন্দ্রিয়ের কাজ পরীক্ষা করে।
১২. অপথ্যালামোস্কোপ
➢ আবিষ্কারক: হারমান ভন হেল্পহোটেজ
➢ সময়কাল: 1850 খ্রি
➢ ব্যবহার: একটি যন্ত্র যা চোখের ভিতর ও চোখের বিভিন্ন অংশগুলিকে পরীক্ষা করে।
১৩. অক্সিজিনেটর
➢ আবিষ্কারক: ওয়াল্ডেমার ভন স্ক্রোডার, ম্যাক্স ভনফ্রে এবং ম্যাক্স গ্রুবার
➢ সময়কাল: 1882 - 1885 খ্রি
➢ ব্যবহার: দেহের বাইরের দিকে যখন রক্ত সংবাহিত হয় তখন এই যন্ত্রের সাহায্যে অক্সিজেন রক্তের মধ্যে মিশিয়ে দেওয়া হয়। এই যন্ত্রটি হৃদপিন্ডের মধ্য দিয়ে শল্য চিকিৎসার সময় ব্যবহৃত হয়।
১৪. স্ফিগমোম্যানোমিটার
➢ আবিষ্কারক: স্যামুয়েল সিগফ্রয়েড এবং কার্লরিটার ভন বাশ্চ
➢ সময়কাল: 1881 খ্রি
➢ ব্যবহার: একটি যন্ত্র যার সাহায্যে নাড়ির গতির হার পরিমাপ করা হয়।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি কেবল ডাক্তারদের সাহায্য করে না, বরং রোগীদের রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা এবং পর্যবেক্ষণেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের সাথে সাথে চিকিৎসার মান বৃদ্ধি পাওয়ায়, নিরাময়ের হারও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই পোস্টে উল্লেখিত যন্ত্রপাতির নাম এবং ব্যবহার জানা কেবল প্রার্থীদের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং সাধারণ জনগণের স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিতেও সহায়ক। চিকিৎসা বিজ্ঞানের এই প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ফলে, আমরা একটি নতুন সুস্থ ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।
আরও পড়ুন...
◼️ ভারতের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তালিকা
◼️ কম্পিউটার সম্পর্কিত ফুল ফর্ম
◼️ ভারতের উল্লেখযোগ্য জাদুঘর ও অবস্থান তালিকা
Please do not enter any spam link in the comment box.